ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কী অপরাধ এই আজিজের!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কী অপরাধ এই আজিজের!

একজন নিরপরাধ ব্যাক্তিকে ধরে জেলে পাঠিয়েছেন যশোরের চৌগাছা থানার পুলিশ। অথচ প্রবাসে মুক্তজীবন কাটাচ্ছে প্রকৃত অপরাধী। তবে নামের মিল থাকাটাই কী তার অপরাধ!

গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার রাতে চৌগাছা থানার এএসআই আজাদের নেতৃত্বে তাকে ধরে নেয়ার পর থেকে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন।

এই হতভাগ্য ব্যাক্তির নাম আব্দুল আজিজ (৬১), বাবার নাম মৃত আহাদ আলী দফাদার। যার পরিবর্তে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে তার নাম আব্দুল আজিজ (৪০), বাবা আহাদ আলী কারিগর।

প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজ এখন কাতারে প্রবাস জীবনযাপন করছেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে লোহিত মোহন সাহার ছেলে নবকুমার সাহার বাড়িতে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন নবকুমার সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন।

এই মামলায় ২০১১ সালে ৩০ মার্চ তৎকালীন বাঘারপাড়া থানায় কর্মরত এসআই গাজী আব্দুল কাইয়ুম ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ৯ আসামির ৭নং আসামি চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজ। চার্জশিটে তার বয়স উল্লেখ করা হয় ৩০ বছর।

চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি বদলি করে যশোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। এই আদালত পলাতক আসামি আব্দুল আজিজসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পুলিশ ২০১২ সালের ১ মার্চ আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালত আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আজিজ ২০১২ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পান। তার আইনজীবী ছিলেন যশোর বারের প্রাক্তন সম্পাদক শাহানুর আলম শাহিন। সেই থেকে আহাদ আলীর ছলে আজিজ আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেন। তবে দেড় বছর আগে আজিজ প্রবাসে চলে যান। বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন। যা তার গ্রাম সিংহঝুলির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রবাসে চলে যাওয়ায় আজিজ আদালতে গরহাজির থাকেন। ফলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ চলতি বছরের ৭ নবেম্বর তার বিরুদ্ধে আবারো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানার ভিত্তিতে গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার রাতে চৌগাছা থানার এএসআই আজাদ প্রকৃত আসামির পরিবর্তে মৃত আহাদ আলী দফাদারের ছেলে আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। জজ আদালত শীতকালীন অবকাশে থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আব্দুল আজিজকে তোলা হলে আদালত তাকে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে নিরপরাধ আব্দুল আজিজ কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।

আসামি আব্দুল আজিজের বর্তমান বয়স ৪০ বছর হলেও গ্রেপ্তার আব্দুল আজিজের বয়স ৬১ বছর। অপরদিকে আসামি আব্দুল আজিজের পিতা আহাদ আলী কারিগর জীবিত থাকলেও আটক আব্দুল আজিজের পিতা মৃত। এব্যাপারে আব্দুল আজিজকে আটককারী এএসআই আজাদ বলেন, ‘আসামির নাম ঠিকানা সঠিক থাকার পরই তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন আটক আব্দুল আজিজের পরিবার থেকেও জানানো হয়নি যে সে মামালার আসামি না।’

তিনি বলেন, ‘আটক আব্দুল আজিজ যদি আটককৃত মামলার আসামি না হন তাহলে তাকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে। নাম ঠিকানা মিল থাকার কারণে আমাদের কিছুই করার নেই।’

এদিকে আটক আব্দুল আজিজের ভাতিজা রাজু বলেন, ‘রাতে না জানাতে পারলেও পরদিন সকালে আমরা জানাই যে আমার চাচা এ মামলার আসামি না। তবুও পুলিশ শোনেনি।’

 

যশোর/ সাকিরুল কবীর রিটন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়