ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পত্রিকা বেঁচে জীবন সংগ্রামে লড়ে যাচ্ছেন সুইটি

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পত্রিকা বেঁচে জীবন সংগ্রামে লড়ে যাচ্ছেন সুইটি

মোসাম্মৎ সুইটি আক্তার, একজন মা, একজন গৃহিণী।

তবে হাল জামানায় এ দুটি শব্দের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই নারীরা। তারা শুধু কর্মক্ষেত্রে সফল নন, সঙ্গে সংসারের আর্থিক হালও ধরছেন।

তেমনই এক সংগ্রামী নারী এই সুইটি আক্তার। যিনি পত্রিকা বিক্রি করে আর্থিক স্বচ্ছলতার সঙ্গে সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, সুইটি খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে নামতে বাঁ পাশের ফুটপাতে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা।

প্রতিবেদক তার নাম-পরিচয় দেওয়া মাত্র সুইটি বলছিলেন, ‘১০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করি। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ কারণে রাস্তায় থাকতে হয়। এছাড়া খিলগাঁও চৌধুরীপাড়াসহ আশপাশের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িতে পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। সব মিলে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। এ টাকা দিয়ে সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে।’

রাইজিংবিডির প্রশ্নে সুইটি বলছিলেন, ‘স্বামী শাহজাহান মিয়া রিকশাচালক। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তার। মাসে বাসা ভাড়া সাত হাজার টাকা। স্বামীর সামান্য আয়ে তিন বেলা খাবারও জুটতো না। তাই সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে খুব কষ্ট হতো। এ কারণে আমি এ ব্যবসায় নেমে পড়ি। প্রথম দিকে পত্রিকা বিক্রি বা স্থান পাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেকেই ভালভাবেও নেয়নি। আবার নিজে শিক্ষিত না হওয়ায় শিক্ষার প্রতি দুর্বলতাও ছিল। এখন আর তেমন ঝামেলা হয় না। এই পত্রিকা বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের হালই নয়, সন্তানদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। উর্পাজনের বেশিরভাগ টাকাই তাদের পেছনে ব্যয় করি। দুই ছেলের একজন কলেজ, অপরজন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। মেয়েটির বয়স তিন বছর। সব ব্যয় মিটিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে এক জমিও কিনেছি। আশা আছে সেখানে একটি মুরগীর খামার করার।’

গুলবাগের রাসেল শিকদার বলছিলেন, ‘সুইটি এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত। একজন নারী হয়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যে সংগ্রাম করছেন তা অনুকরণীয়। প্রতিদিনই তাকে অফিসে যাওয়ার সময় দেখি। তিনি নিজে শিক্ষিত না হলেও পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমে শিক্ষার আলোও ছড়াচ্ছেন।’

চৌধুরী পাড়ার আসমা খাতুন বলেন, ‘আমি তার কাছ থেকে প্রতিদিন পত্রিকা রাখি। মানবিক কারণে মাস শেষে যে বিল আসে তার থেকে কিছু বেশি টাকা দিই। একজন নারী জীবন বাঁচাতে এমন পরিশ্রম করতে পারেন তা আগে কখনো দেখিনি।’



ঢাকা/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়