ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

২৪ বছর ধরে বাজার ঝাড়ু দেন এই ইউপি মেম্বার

রাজিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২৪ বছর ধরে বাজার ঝাড়ু দেন এই ইউপি মেম্বার

ভোর হলেই ঝাঁড়ু হাতে বেড়িয়ে পড়েন হেলাল উদ্দিন (৭১)। প্রথমে গ্রামের মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে নেন। এরপর শুরু হয় বাজার ঝাড়ু দেবার কাজ।

এই রাস্তা-ওই রাস্তা, এগলি-ওগলি সবই নিজ হাতে পরিষ্কার করেন। ১৯৯৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার নির্বাচিত হবার পর থেকে তিনি এই ঝাঁড়ু দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। মহেশ্বরচাঁদা নামের ছোট বাজারটি তাই সারাক্ষণ থাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

হেলাল উদ্দিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের মৃত ফকির আলীর পুত্র। পেশায় তিনি কৃষক। স্ত্রী মাহিরন নেছা আর চার মেয়ে, তিন ছেলে নিয়ে তার সংসার।

স্থানীয়রা জানান, হেলাল উদ্দিন বাড়িতে আছেন, না কোথাও বেড়াতে গেছেন তা বাজার দেখলেই বোঝা যায়। বাজার পরিষ্কার থাকলে বোঝা যায় তিনি বাড়িতে আছেন, আর অপরিষ্কার দেখলে বোঝা যায় যে, তিনি বাড়িতে নেই।

এই বাজার পরিষ্কারের কাজটি হেলাল উদ্দিন একেবারে বিনামূল‌্যে করে থাকেন। বাজার ঝাঁড়ু দেওয়ার বিনিময়ে তাকে কেউ একটা চা খেতে বললেও তিনি খান না। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে ২৪ বছর ধরে এই কাজটি তিনি করে যাচ্ছেন।  

হেলাল উদ্দিন জানান, সংসারে অভাব থাকায় পড়ালেখা ছেড়ে ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে মাঠে কাজে যেতে হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন তিনি। বর্তমানে কৃষি কাজ করেই তার সংসার ভালোই চলছে।  

তবে ছোট থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য চেষ্টা করেছেন। ১৯৯০ সাল থেকে কৃষকদের জন্য কাজ শুরু করেন। কৃষক নেতা মরহুম ওমর আলীর নেতৃত্বে তারা কাজ শুরু করেছিলেন। সম্মিলিতভাবে, বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ করে এলাকার কৃষিতে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। তাদের প্রচেষ্টায় যারা এক সময় খেতে পেতো না তারাও স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের এই কাজে সহযোগিতা করেছেন দেশের কিছু কৃষি বিজ্ঞানী।

আর এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে ১৯৯৬ সালে তার গ্রাম কালীগঞ্জের মহেশ্বরচাঁদায় কৃষি ক্লাব প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঘিরে ওই বছরই গড়ে ওঠে মহেশ্বরচাঁদা বাজার।

হেলাল উদ্দিন আরো জানান, যে বছর বাজার প্রতিষ্ঠা হয়, ওই বছরই তিনি নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ৬ ওয়ার্ডে মেম্বার নির্বাচিত হন। এরপর তিনি জনগণের সেবা দিতে নানা কাজের সঙ্গে বাজার পরিষ্কার করাও শুরু করেন। সেই থেকে প্রতিদিন ভোরে তিনি এই বাজার পরিষ্কার করেন।

ওই বাজারের পাশের বাসিন্দা আব্দুল সালেক রাইজিংবিডিকে জানান, কৃষক হেলাল উদ্দিন তাদের এলাকার সকলের কাছে প্রিয় মানুষ। এলাকার মানুষকে তিনি নানা ক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছেন। তিনি নিজ বাড়িতে কেঁচো সার তৈরি করেন আর সবাইকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

তাছাড়া, বিষমুক্ত সবজি চাষে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন ‍তিনি। ইতোমধ্যে কৃষিতে অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকও লাভ করেছেন তিনি। এছাড়াও নিজে বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি বলে এলাকার গুণী মানুষের জীবন নিয়ে নিয়মিত ডায়েরিও লেখেন তিনি।

বাজারের দোকানদার আব্দুল আজিজ রাইজিংবিডিকে জানান, কৃষক হেলাল উদ্দিনের কারণে তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাজার পেয়ে থাকেন। তিনি আসলে মানুষের কল্যাণেই সবসময় কাজ করে থাকেন।  

নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনি লষ্কার রাইজিংবিডিকে জানান, হেলাল উদ্দিন সবসময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকেন। নিয়মিত বাজার ঝাঁড়ু দেওয়া ছাড়াও আরো অনেক প্রশংসনীয় কাজ তিনি মানুষের কল্যাণে নীরবে করে যাচ্ছেন। সমাজ ও এলাকার মানুষের জন্য তার এই কাজ অন্যদের উৎসাহ জোগায়।


ঝিনাইদহ/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়