ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সম্প্রদায়ের নাম ‘মানতা’

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সম্প্রদায়ের নাম ‘মানতা’

সম্প্রদায়ের নাম ‘মানতা’। এক সময় সমতল ভূমির বাসিন্দা থাকলেও ক্রমাগত নদীভাঙনে নিঃস্ব হতে হতে এরা এখন নৌকার বাসিন্দা।

বলা যায়, একেকটি নৌকা একেকটি পরিবার। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারা নৌকাতেই কাটিয়ে দেয়। জেলেদের মতো মানতা সম্প্রদায়ের জীবিকা নির্বাহ হয় মাছ ধরে।

উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রদায়টিকে দেখা যায়। চলমান ধারার জীবন যাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে এ সম্প্রদায়ের মানুষ।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট, কমলনগরের মতিরহাট, রায়পুরের হাজীমারা, রামগতির আলেকজান্ডার সহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ‘মানতা’সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা হয়।

তারা জানান, নৌকা জীবনে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়টি তাদের চিন্তারও বাইরে। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ারও সুযোগ নেই। নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। নদীর পানি ব্যবহার হয় সব কাজে। পরিবার পরিকল্পনা কী তারা জানেন না। সরকারের উন্নয়ন বার্তাগুলো তাদের কাছে পৌঁছায় না। দুর্যোগ-দুর্বিপাক তাদের জীবনে নিত্যসঙ্গী।

জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিক হলেও মানতা সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিচু। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে প্রান্তিকের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য সহায়তা এলেও মানতা’রা সেই ধারার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হতে পারছেন না।

 

 

কদবানু নামে ষাটোর্ধ্ব এক ‘মানতা’ নারী জানান, নদী সব কেড়ে নেওয়ার পর যোগ দিয়েছেন নৌকাবাসীদের সাথে। তার সম্বল হচ্ছে একটি জাল আর নৌকা। পূর্বে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি ছিল তার। তিনি কয়েকমাস আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর চেয়েছেন। কিন্তু মানতা হওয়ায় সেটি মেলেনি তার ভাগ্যে। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী দুস্থ, বয়স্ক ও দশ টাকার চালের কার্ডের জন্য কয়েকবারই গিয়েছেন স্থানীয় চররমনি মোহন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। ততবারই মানতা বলে ফিরে আসতে হয়েছে শূন্য হাতে।

তিনি জানান, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যেতে হয় তাদের। বিনিময়ে দেওয়া হয় রুটি আর চা। কেউ যেতে অপরাগতা প্রকাশ করলে গালমন্দ করেন নেতারা। আবার নির্বাচন আসলে বিভিন্ন সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে সেই নেতারাই মানতাদের কেন্দ্রে নিয়ে যান ভোট দিতে। কিন্তু ভোটের পরে সবকিছু ভুলে যান নেতারা।

সচেতন নাগরিক কমিটি লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সদস্য ও শিক্ষাবিদ জেড এম ফারুকী বলেন, ‘মানতা সম্প্রদায় বা নৌকায় বসবাসকারীরা বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাই তাদেরকে পিছনে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য ক্ষুদ্র এই জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরী।’

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, এখানের মানতাদের নৌকা থেকে ভূমিতে ফেরানোর জন্য বহুবারই চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা নৌকা ছেড়ে গুচ্ছগ্রামে যেতে আগ্রহী নয়। তাই তাদের পুনর্বাসন করা যায়নি।

সরকারি বিভিন্ন সুবিধাসমূহ পাচ্ছেন না মানতারা- এটা জানা নেই এই জেলা প্রশাসকের। খোঁজ নিয়ে বয়স্ক, বিধবা, দুস্থভাতাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।



লক্ষ্মীপুর/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়