ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঢাকার কাছে থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা!

আরিফুল ইসলাম সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৩ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকার কাছে থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা!

রাজধানী ঢাকার অতি নিকটে হলেও একটি ব্রিজের অভাবে খেয়া নৌকা ছাড়া নদী পাড় হতে পারেন না আশুলিয়ার রুস্তমপুরের বাসিন্দারা।

সাভারের আশুলিয়ায় তুরাগ নদের পাশে রুস্তমপুর থেকে আশুলিয়া বা উত্তরা আসার পথে ভরসা শুধুই খেয়া নৌকা। গত দুই দশকে অনেক জনপ্রতিনিধি আশ্বাস দিয়েছেন তবে ব্রিজ করে দেননি কেউই। ঢাকার কাছে থেকেও তারা যেন একটি দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে পড়েছেন

স্থানীয়রা বলেন, গত দুই দশকে অনেকেই এখানে ব্রিজ হবে, ব্রিজ হবে বলেছেন। অনেকে এসে জায়গাটি দেখেও গেছেন। কিন্তু কিছুতেই কোন ফল হয়নি।

রুস্তমপুরের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অর্ণব বলছিলেন, তারা ঢাকার খুব কাছে থাকেন। কিন্তু ঢাকায় ঢুকতে একটা নদী পাড় হতে হয় খেয়া নৌকায়। নৌকা না থাকলে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।  

শুধু অর্ণবের কথা নয় এটি।  রুস্তপুরসহ আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষের মনের কথা এটি। তারা বলেন, এখানে একটি ব্রিজ খুবই দরকার। ব্রিজটি হলে আমরাও ঢাকার উন্নয়নের পূর্ণ সুফল ভোগ করতে পারব, অসহায়ত্ব কাটবে। 

জানা যায়, শহরের খুব কাছে হলেও এই একটি ব্রিজের কারণে পিছিয়ে আছে এই গ্রামটি। তুরাগ নদ পাড় হলেই রাজধানীর উত্তরা যাওয়া সহজ। বিকল্প পথ না থাকায় এ গ্রামের মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে নদী পথের এই রুট ব্যবহার করেন। এতে প্রায় ঘটছে নৌকা ডুবির মত নানা দুর্ঘটনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ব্রিজ এখন আশপাশের লাখো মানুষের দাবী। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড় হওয়ার জন্যে ঘাটে অপেক্ষা করছে একটি মাত্র ছোট ডিঙ্গি নৌকা। মাঝি জানালেন, সারাদিনে অসংখ্য মানুষের ভিড় হয় এখানে। প্রতিনিয়ত হাজারও গ্রামবাসী, শিক্ষার্থী, পোশাককর্মী, ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করেন। ওদিকে ভালো ঘাট না থাকায় দুই পাড়েই শিশু ও বৃদ্ধদের নৌকায় উঠতে গিয়ে অসুবিধার মুখোমুখি হন। এছাড়া সময়ক্ষেপণ তো রয়েছেই।  

স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, পাশেই রাজধানী শহর। আশেপাশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের ব্রিজটি হল না। গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে খেয়া নৌকার জন্যে বসে থাকতে হয়। 

রুস্তমপুরের মেয়ে তামান্না পড়ছেন ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সপ্তাহে ৬ দিনই তার এই নৌকা পাড় হয়ে ক্লাশে যেতে হয় বলে জানালেন।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আসে, ছবি তুলে নেয়। নিউজ করে দেয়। কিন্তু আমাদের ব্রিজটাতো হচ্ছে না! কারো চোখেও পড়ছে না। এই ব্রিজটি হলে আমাদের এলাকার মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন আসবে। আমাদের জীবনে আরো গতি আসবে।   

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাত্তার বলেন, খেয়া নৌকা দিয়েই সব কাজ চালাতে হয়। পণ্য পরিবহণে এছাড়া আর কোন উপায় নাই। এই কারণে অনেক সময় আমরা দুর্ঘটনার শিকার হই। নৌকার জন্যে দাড়িয়ে থাকা লাগে। এই এলাকার মানুষ সঠিক সময়ে তার গন্তব্য স্থলে পৌছাতে পারে না। এছাড়া নদীর পানি কমে গেলে নদীর পানি থেকে বিকট গন্ধ বের হয়। তখন নৌকায় পারাপার হওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। 

এদিকে ব্রিজটি দ্রুতই করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আশুলিয়ায় ইউনিয়ের চেয়ারম্যান সাহব উদ্দিন মাদবর। তিনি বলেন,  ব্রিজটির মাপ-যোগসহ প্রাথমিক কাজ গুলো করা হয়েছে। এখন সয়েল টেস্ট হবে। আমরা আশা করি অচিরেই এই ব্রিজটির কাজ শুরু হবে। 

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালহে হাসান প্রামানিক বলেন, যেহেতু সেখানে সড়ক ও জনপথের সড়ক আছে সেহেতু তাদের কাছ থেকে এনওসি নিয়ে এটার ডিজাইন এনে সেই ডিজাইন নিয়ে তারপর টেন্ডারে যাবে। এটি যত দ্রুত সম্ভব টেন্ডারে যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।  

 

সাভার/আরিফুল ইসলাম সাব্বির/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়