নদীর মাঝখানে দেড় কিলোমিটার লম্বা বাঁধ!
নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
দখল হয়ে গেছে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ভূলুয়া নদীর একটি বড় অংশ। দখলদার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
তারা সুবর্ণচরের চরজুবলি ইউনিয়নের চরজিয়াউদ্দিন এলাকায় ওই নদীর মাঝখানে এক থেকে দেড় কিলোমিটার লম্বা বাঁধ দিয়ে মাছের প্রজেক্ট তৈরি করছে।
তবে দায় না নিয়ে দখলকারীদের অনেকে অভিযোগ এড়িয়ে গেলেও খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয়দের ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মেঘনার শাখা হাতিয়া নদীর একটি অংশ নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জিয়া উদ্দিনের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এটি স্থানীয়ভাবে ভূলুয়া নদী বলে পরিচিত।
তিন দশক আগেও মেঘনার সঙ্গে মিশে একাকার ছিল নদীটি। ছিল তীব্র স্রোত। এ নদীর স্রোতে ভেঙেছে হাজারো একর ফসলি জমি ও বিলিন হয়েছে বাড়ি ঘর। লক্ষ্মীপুর-হাতিয়ার অন্যতম নৌ রুটও নদীটি। কালের বিবর্তনে মেঘনা সরে যাওয়ায় ভূলুয়া হারায় তার স্বরূপ। তবে এখনও বর্ষায় টইটুম্বর থাকে নদীটি। হাজারো মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো এ নদীতে। শুষ্ক মৌসুমে যখন আশপাশের পুকুর শুকিয়ে যায় এবং ডিপটিউবওয়েলে যখন পানি থাকে না তখন নদীতে থাকা পানিই একমাত্র ভরসা হয় আশপাশের মানুষের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দুই বছর পূর্বে ভূঁয়ারহাটের দক্ষিণ পাশে সাবেক ৪নং ঘাট এলাকায় কিছু লোক নদীতে বাঁধ দেয়। তখন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসন তা উচ্ছেদ করে। সম্প্রতি ১০-১৫দিন পূর্বে হঠাৎ একটি গ্রুপ স্কেভেটর মেশিন নেমে পড়ে চরজিয়াউদ্দিনের অংশে। সেখানে নদীর মধ্যখানে প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে লম্বালম্বিভাবে বাঁধ দেয়া হয়। লম্বা বাঁধের মাঝে মাঝে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে নদীর মধ্যে পুকুর তৈরি করা হয়। এখানে মাছ চাষ করার কথা জানায় ওই স্কেভেটর চালক।
স্থানীয় কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ জানান, সরকার যখন ভরাট নদী পুনঃখনন এবং নদী দখলকারীদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিক তখন সরকার দলের নেতাকর্মীরা নদী দখলের মতো গুরুতর অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি যখন ভূলুয়ার তলানিতে, তখন দিনে দুপুরে মাঝ নদীতে লম্বালম্বী বাঁধ দিতে শুরু করল প্রভাবশালীরা। প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়। বাঁধের উপর লাগানো হয় কলা গাছ। নদী বেঁধে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে মাছের প্রজেক্ট। আর এর অভিশাপ বহন করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলার পানি নিস্কাশনের অন্যতম মাধ্যম এ নদী। বাঁধের ফলে নদী সরু হবে, কয়েক বছর পর একদম শুকিয়ে যাবে। তখন বর্ষায়ও পানি থাকবে না। এতে মাছ শিকার তো দুরের কথা শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানিটুকুও পাবে না তারা। রবি মৌসুমে কৃষি কাজও করা যাবে না। আবার বর্ষায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা আরো চরম আকার ধারণ করবে। তবে কে বা কারা এ বাঁধ দিচ্ছে তাদের নাম বলতে রাজি হয়নি স্থানীয় বাসিন্দারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা চরজুবলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন রায়হান, চরবাটা ইউনিযন যুবলীগের সভাপতি মো. ফয়সাল, একই দলের বাহার উদ্দিন, মো. এরলাম, আইয়ুব আলী ও আশ্রাফ উদ্দিনসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেকে এ কাজের সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কথা হয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী নেতা জসিম উদ্দিন রায়হান এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. ফয়সালের সঙ্গে। তারা জানান, নদী দখল করে বাঁধ দেওয়ার সঙ্গে তারা কোনোভাবেই যুক্ত নন। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
অভিযুক্তদের মতো নদী দখলের বিষয়টি জানে না প্রশাসনও। তবে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত দখল উচ্ছেদে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, ইতোমধ্যে তিনি সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
সুজন/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন