ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গৃহস্থলীর জিনিসপত্র বানিয়ে সংসার চলে

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২০, ২৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গৃহস্থলীর জিনিসপত্র বানিয়ে সংসার চলে

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রেলস্টেশনের ধারে রেলওয়ের জমিতে ২৫-৩০ ঘর বেদ সম্প্রদায়ের ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। গৃহস্থলীর জিনিসপত্র বানিয়ে তাদের সংসার চালে। 

এদের একজন নাগিনা রাণী। স্বামী এবং ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছোট সংসার তার। নিজে শিক্ষার আলো না পেলেও চান ছেলে-মেয়েকে শিক্ষিত করতে। সেই জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন দিন-রাত।

শুক্রবার ভোরে হাতে একটা দা ও কিছু বাঁশের চাটাই নিয়ে ঝুপড়ি ঘর থেকে বের হতে দেখা গেল নাগিনা রাণীকে। পরে রেল লাইনের ধারে মাদুর পেতে বাহারি জিনিসপত্র তৈরি করতে করতে কথা বলেন।

নাগিনা রাণী বলেন, তারা গরিব মানুষ। তারপর সনাতন ধর্মাবলম্বী বেদ সম্প্রদাযের। সমাজের সকলের সঙ্গে মিশতেও পারেন না। বাঁশ দিয়ে গৃহস্থলীর জিনিসপত্র বানিয়ে সংসার চালান।

তিনি জানান, বাঁশ দিয়ে ডালা, শরপশ (ঢাকনা), ফুলদানি, কুলা, কলমদানি, ঝুঁড়ি, ঝাঁকাসহ গৃহস্থলীর ব্যবহারের জিনিসপত্র তৈরি করেন। তার স্বামী সেটা বাজারে বিক্রি করেন।

নাগিনা রাণী নিজে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। তবে অভাব-অনাটনের মধ্যেও ছেলেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পড়িয়েছেন। এখন বিএসসি পড়ছে। আর মেয়ে পড়ছে হাই স্কুলে।

স্বামী সুকুমার বেদ বলেন, একা কাজ করে সংসার চালানো কঠিন। অন্য কাজও ভালো পারেন না। তিনি বাঁশ কিনে এনে দেন; আর নাগিনা সেটা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করেন। প্রতি মঙ্গলবার মিরপুর হাটে সেগুলো বিক্রি করেন।

তিনি জানান, ঝুঁড়ি, কুলা, ফুলদানি, ডালা ২৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন। বাড়ি বাড়ি বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়।

তবে আগের মতো বাঁশ পাওয়া যায় না। এখানে তার মতো ৩০ জন এ কাজ করেন। অনেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তাদের কেউ এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কেউ সেলুনে, আবার কেউ ভ্যান চালান।

এ পেশায় এখন আর তেমন আয় হয় না। এক চালান বাঁশের কাজ করলে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হয়। সেটা করতে সময় লাগে ৮-১০ দিন।

বেদ সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে মিরপুর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘আলো’। 

এই সংস্থার নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ জানান, বেদ সম্প্রদায়ের মানুষের শিক্ষিত করতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বেদ সম্প্রদায়ের মানুষ সরকারি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ দেখান না। তারা নিজেদের মতো থাকতে পছন্দ করেন।  

 

কুষ্টিয়া/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়