ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, তবু স্কুলে যাচ্ছেন তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, তবু স্কুলে যাচ্ছেন তিনি

বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে তার। এই বয়সেও শিক্ষার্থী হিসেবে স্কুলে যাচ্ছেন যশোর শহরের হাসিনা বেগম।

যশোর শহরের শংকরপুর গোলাম প্যাটেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাস শেষ হলে শুরু হয় হাসিনা বেগমের ক্লাস। শুধু তিনিই নন, এখানে পড়েন ৪৮ বছরের হামিদা খাতুন ও ৪৫ বছরের ছকিনা বেগমসহ আরো বেশ ক’জন।

তাদেরকে এই বয়সেও শিক্ষার এমন সুযোগ করে দিয়েছে যশোর ইনফো ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

এই সংস্থাটি তাদেরকে পুঁথিগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা দানের মাধ্যমে আলোকিত করছে। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি বয়স্ক নারীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৯।
 


এখানে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। শংকরপুর গোলাম প্যাটেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষে সপ্তাহে ৬দিন চলছে শিক্ষার এ কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আবার অনেকে ব্যবসাও করেন। সারাদিনের কাজ শেষে পড়ন্ত বিকেলে আসেন এ শিক্ষা কেন্দ্রে আসেন তারা।

তাদের শেখানো হচ্ছে বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, ধর্ম, স্বাস্থ্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। শেখানো হচ্ছে মোবাইলের ব্যবহার। ৯৯৯, ৩০৩ ও ১০৯ এর মতো হটলাইনগুলোর সুযোগ-সুবিধা।

এখানের শিক্ষার্থী হামিদা খাতুন বললেন, ‘ছোট বেলায় লেখাপড়া করেছি সেটা এখন আর মনে নেই। এখন আমি থ্রিপিচ ও কাপড়ের ব্যবসা করি। কিন্তু হিসাব করতে পারতাম না। গত তিন বছর আমি এই শিক্ষা গ্রহণ করে এখন ভালোভাবে সবকিছু লিখে রাখতে পারি। প্রতিদিন বিকেলে আমরা সবাই স্কুলে আসি। এই শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে আমাদের কেউ ব্যবসায় ফাঁকি দিতে পারবে না।’

হাসিনা বেগম বলেন, ‘চার বছর ধরে এখানে বাংলা, ইংরেজি, অংক ও ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করেছি। আমি যার কাছে যা পাবো তা হিসাব করে এখন নিতে পারি। আগে মোবাইল চালাতে পারতাম না কিন্তু এখন পারি। সেই সঙ্গে অনেক কিছু শিখতে পারছি।’

এসব বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য কেন্দ্রে আছেন তিনজন শিক্ষক। যারা এখনও শিক্ষাজীবন শেষ করেননি। কোনো প্রকার বেতন ভাতা ছাড়াই কেবল মনের প্রশান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

শিক্ষক সোনিয়া খাতুন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে আমি মা ও নানী বয়সের নারীদের শিক্ষা দেই। এখানে যেসব শিক্ষার্থী আছে তারা খুব আন্তরিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাদের পড়াতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।’

যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী মিশু বলেন, ‘১১ বছর ধরে চলা এ কেন্দ্রটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে স্থায়ী অবকাঠামোর প্রয়োজন। যেকোনো সরকারি জায়গা যদি আমাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়, তাহলে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ছোট-খাটো স্থাপনা গড়ে তুলতে পারি। যার মাধ্যমে দীর্ঘদিন আমরা এ কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবো।’



যশোর/রিটন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়