ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনাভাইরাসে বন্ধ দেশের কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাসে বন্ধ দেশের কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চীনে সাতক্ষীরার কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি। ফলে বিপাকে পড়েছেন এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার মানুষ।

জানা যায়, দেশের কাঁকড়া ও কুঁচে ব্যবসায়িরা চীনের আমদানিকারকদের কাছে আটকে গেছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। ফলে একদিকে ব্যবসা বন্ধ অপরদিকে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়ৎদাররাও।

স্থানীয় চাষিরা জানান, সাতক্ষীরায় দুই প্রকার কুঁচের চাষ হয়। মিষ্টি পানির কুঁচে কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর লোনা পানির কুঁচে বিক্রি হয় কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। কয়েক বছর আগে চিনসহ মধ্যপ্রাচের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের কাঁকড়া ও কুঁচে আমদানিতে আগ্রহী হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি শুরু হয়।

কাঁকড়া গ্রেড অনুযায়ি বিক্রি শুরু হয়। কাঁকড়ার আকার ও গুণগত মান অনুযায়ি কেজি প্রতি চীনে বিক্রি হতো এক হাজার ৮০০ থেকে দু’ হাজার টাকায়।

চীনে রপ্তানির জন্য সাতক্ষীরা থেকে দু’তিন দিন পরপর পাঁচ থেকে ছয় টন কুঁচে ঢাকার উত্তরায় পাঠানো হতো। করোনাভাইরাসে আক্রমণের ফলে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খরিদ্দার না থাকায় সংগ্রহকৃত কুঁচে থেকে প্রতিদিনই কিছু কিছু কুঁচে মারা যাচ্ছে। মারা যাওয়া কুঁচে শুকিয়ে কাঁকড়া ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, কলবাড়ি ও বুড়িগোয়ালিনিতে। শুকনা কুঁচে কেজি প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।

দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার হেমন্ত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হেমন্ত দলুই ও সন্দীপ পোইটারের, প্রসেনজিৎ মন্ডল জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তারা পারুলিয়া বাজারে কাঁকড়া ও কুঁচে কেনা বেচা করে থাকেন। কালীগঞ্জের উজিরপুর, দেবহাটার গাজীরজাট, বদরতলা, কুলিয়া পারুলিয়াসহ বিভিন্ন বাজার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা এ বাজারে কুঁচে ও কাঁকড়া বিক্রি করে থাকেন।

দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়ার এলাকার কুঁচে ব্যবসায়ী সুনীল ভুঁইয়া জানান, তিনি ১২ বছর ধরে কুঁচে মজুত করে ঢাকায় পাঠান। তারা ৬ জন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চীনে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর বাজার থেকে যে কুঁচে তিনি কিনছেন তার বড় অংশই মারা যাচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েছেন।

একই উপজেলার পারুলিয়া বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ি মনিরুজ্জামান ও মিজানুর রহমান জানান, চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বকেয়া টাকা ঢাকার মালিকদের কাছ থেকে পাচ্ছেন না। ঘের মালিক ও খুঁচরা বিক্রেতাদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সমস্যায় রয়েছেন তারা। বর্তমানে যে কাঁকড়া কিনছেন তা অনেক হ্যাচারি মালিক কম দামে কিনে মজুদ করছেন।

সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ি সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব মন্ডল জানান, ঢাকার উত্তরার তমা এন্টারপ্রাইজ, জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ ও জেডএল এন্টারপ্রাইজ, কাশেম ইন্টারন্যাশনাল ও সিরাজ ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি কোম্পানিতে তারা কাঁকড়া ও কুঁচে সরবরাহ করে থাকেন। ওই সব কোম্পানি মূলত চীন ও উত্তর কোরিয়াতে মাল পাঠায়। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সাতক্ষীরার ব্যবসায়িদের প্রায় ১০ কোটি টাকা আটকে পড়েছে ঢাকার ব্যবসায়িদের কাছে। এতে অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।

তিনি আরোও জানান, মধ্যপ্রাচে গত মঙ্গলবার মাত্র এক টন কাঁকড়া সাতক্ষীরা থেকে রপ্তানি হলেও তার মূল্য চীনা বাজার থেকে অর্ধেকেরও কম। এ ছাড়া গ্রেডগত হিসাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবিলম্বে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করা না গেলে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সাতক্ষীরার কয়েক হাজার মানুষ কর্ম হারিয়ে মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, গত বছরে জেলায় ৩১০.৯ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। ওই জমি থেকে ২১৯০.৪ মেট্রিকটন ও সুন্দরবন থেকে ১১০৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। তবে কুঁচে কি পরিমান সংগ্রহ করা হয়েছিল তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।



শাহীন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়