ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাজামের ভুলে...

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাজামের ভুলে...

হাজাম (খৎনাকারী) ফুরকান আলী খলিফা

চারিদিকে নানা আয়োজন। সাদিককে (৯) গোসল করিয়ে আনা হয়েছে। নতুন লুঙ্গি পরানো হয়েছে। মাথায় একটা টুপিও কে যেনো পরিয়ে দিল। চারিদিকে একটা সাজসাজ ব‌্যাপার। ছোট্ট সাদিকও প্রস্তুত। অজানা একটা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন সে। কখন আসবে হাজাম (খৎনাকারী) সেই অপেক্ষায় বাড়ির সবাই।

হাজাম এলেন। এ কাজে তার দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা। হাজারো বালকের খৎনা হয়েছে তার হাতে। একটুও কাঁপেনি হাত কোনোদিন। অপেক্ষারত সাদিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সামান‌্য রসিকতা করলেন। লজ্জা পেয়ে গেল সে। আশপাশের সবার চোখেমুখে কেমন যেনো দুষ্টুমী খেলা করছে। সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

আসনে বসানো হলো সাদিককে। এলো সেই মহেন্দ্র ক্ষণ। সবাই প্রস্তুত। হাজাম ফুরকান আলী খলিফা (৭০) তার ব‌্যাগ থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ বের করে সাজিয়ে রাখলেন। কে যেনো দুই হাত দিয়ে সাদিকের চোখ চেপে ধরলো। হাজাম তার প্রিয় ক্ষুরের ধার পরীক্ষা করে নিলেন। এরপর অনায়াস হাতে পোচ মারলেন। একবার নয়, দুবার।

হঠাৎ সাদিকের আকাশ-পাতাল কাঁপানো চিৎকারে আশপাশ থেকে ছুটে এলেন অনেকে। এ চিৎকার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু অন‌্যরকম। সাদিকের বাবার তখন চোখ কপালে উঠে গেছে। যা কখনো ভাবেননি, তাই হয়ে গেছে। হাজামের দুই পোচে লিঙ্গের দুই তৃতীয়াংশ হারিয়েছে সাদিক। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে। রক্ত বন্ধ করার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। এদিকে হতভম্ব হয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন হাজাম ফুরকান আলী খলিফা। এতো দিনের বিশ্বস্ত হাত এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করবে ভাবতেই পারছেন না তিনি।

কুষ্টিয়ার শহরতলীর উদিবাড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবার এ দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে। আকতার হোসেনের ছেলে সাদিক উদিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার পর সে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর হাজাম ফুরকান আলীকে আটক করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। আটক ফুরকান সদর উপজেলার কবুরহাট খলিফাপাড়ার মৃত আব্দুল আজিজ খলিফার ছেলে।

সাদিকের বাবা আকতার হোসেন জানান, বৃহষ্পতিবার সকালে ছেলের খৎনা করতে হাজাম ফুরকান আলী বাড়িতে আসেন। খৎনা করতে গিয়ে পর পর দুইবার খুর চালিয়ে লিঙ্গের মাথা থেকে দুই টুকরো করে ফেলেন তিনি। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ওহিদুল আলম জানান, শিশু সাদিকের লিঙ্গের দুই তৃতীয়ংশ কেটে গেছে। এতে প্রচুর রক্ষণ হয়েছে। রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় শল্য চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শিশুটিকে বাঁচানো গেলেও পরবর্তীতে কতটুকু স্বাভাবিক হতে পারবে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘খৎনা করতে গিয়ে শিশুর লিঙ্গ কেটে ফেলানোর অভিযোগে হাজাম (খৎনাকারী) ফুরকান আলী খলিফাকে আটক করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ফুরকান আলী খলিফার বরাত দিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার এস আই আতিকুর রহমান জানান, হাজাম ফুরকান আলী দাবি করেন- তার হাতে অন্তত ২০ হাজার বালকের খৎনা হয়েছে। কোনোদিন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এদিন সাদিকের খৎনার সময় সব ঠিকঠাকই ছিল। ক্ষুরের পোচ দেয়ার সময় হঠাৎ শিশুটির লিঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। এতেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

 

কাঞ্চন কুমার/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়