ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কেউ শোনে না কইতুরিদের কথা

রুদ্র রুহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেউ শোনে না কইতুরিদের কথা

‘চালের টিনে জং ধইর‌্যা ফুডা অইয়া দেওইর পানি পড়ে। খুডি ভাইঙ্গা গ্যাছে। কতকুনে (কখন) জানি ঘরডা ভাইঙ্গা মাথার উপরে পড়ে, ডরে থাহি। চেয়ারম্যান-এমপিগো কত কইলাম, কেউ মোগো কতা হোনে না’।

রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন বরগুনার পোটখালী এলাকার মিম আবাসনের বাসিন্দা কইতুরি বেগম।

১৭ বছর আগে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি কক্ষ বরাদ্দ পেয়েছিলেন স্বামীহারা কইতুরি বেগম। বৃদ্ধ বয়সে নাতি-নাতনিদের দেখাশোনা করে এখন সময় কাটে তার।

২০০২ সালে মিম ও উচ্ছ্বাস আশ্রয়ন প্রকল্পের আটটি ব্যারাকে ১২০টি করে মোট ২৪০টি পরিবারকে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। একইভাবে ২০০৮ সালে পার্শ্ববর্তী আরো দুটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ২৪০টি ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছিল সরকার। আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরগুলোর মেঝে পাকা, চারপাশে টিনের বেড়া। মাঝখানে টিনের বেড়া দিয়ে আলাদা করে কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্ত দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সংস্কার না করায় ঘরগুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিম আবাসনের ঘরগুলোর বেড়া ও চালার টিনে মরিচা ধরে বড় বড় ছিদ্র হয়েছে। বৃষ্টির পানি পড়া থেকে নিস্তার পেতে টিনের চালার ওপরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। মেঝেতে গর্ত হয়েছে। পাকা খুঁটির পলেস্তরা খসে রড বেরিয়ে এসেছে। আশ্রয়নের অবকাঠামো এতটাই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ যে, ধসে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ আবাসনে দিনের বেলায় সাধারণত নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা থাকেন। পুরুষ ও কর্মজীবী নারীরা দিনের বেলায় বাইরে কাজ করেন।

ওই আবাসনের বাসিন্দা আবুল কালাম। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। জালের ফাঁস বুনতে বুনতে আবুল কালাম বলেন, ভাইজান, জীবনডা বাঁচাইতে আশ্রয় নিছিলাম এহানে। এহন যে অবস্থা, হ্যাতে যেকোনো সময় পড়ানডা যাইবে। মোগো কতা এট্টু ল্যাহেন, যদি সরকার ফিররা চায় মোগো দিগে। নাইলে মোগো বাঁচার কোনো উপায় থাকপে না’।

সামসুল হক দিনমজুর। সারাদিন খেঁটেখুটে যে রোজগার হয় তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালান তিনি। সামসুল হক বলেন, কতজন যে আইলো, দ্যাকলো মোগো দুরাবস্থা, কিন্তু কেউ মোগো লাইগ্যা কিছু হরে না। সবাই খালি কয়, দ্যাকতে আছি’।

মিম আবাসনের বাসিন্দাদের সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ২০০২ সালে আবাসনে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৮ বছরে আশ্রয়নের ঘরগুলোর অবকাঠামো এতটাই নাজুক হয়েছে যে, এখন তা বসবাসের উপযোগী নেই। বাসিন্দারা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু বসবাসের উপযোগী করতে যথাসাধ্য সংস্কার করেছে। কেউ নিজেরা বেড়া দিয়েছে, পলিথিন দিয়েছে টিনের ওপরে। এভাবে এখন আমরা সবাই মহাদুরবস্থায় দিনাতিপাত করছি। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সংসদ সদস্য মহোদয়কে জানিয়েছি। কিন্ত কেউ আমাদের জন্য কিছু করছে না। আমরা এখন কোথায় কার কাছে যাব?

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আশ্রয়ন ও আবাসনগুলো সংস্কারের জন্য আমরা শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেব। ইতোমধ্যেই আমরা বরগুনার সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ আবাসন ও আশ্রয়নের তালিকা প্রস্তুত করার কাজ করছি। বরাদ্দ পেলে সংস্কারের উদ‌্যোগ নেবে জেলা প্রশাসন।

 

বরগুনা/রুদ্র রুহান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়