ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অন্ধ কাজলীর কণ্ঠে মুগ্ধ সবাই (ভিডিও)

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অন্ধ কাজলীর কণ্ঠে মুগ্ধ সবাই (ভিডিও)

জন্মের তিন বছরের মাথায় অসুস্থতায় দুই চোখের আলো নিভে যায় কাজলী খাতুনের। ফিকে হয়ে যায় পৃথিবীর আলো বাতাসে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ১৫ বছর বয়সে এক ভিক্ষুকের সঙ্গে বিয়ের পর জীবিকার তাগিদে নেমে পড়েন রাস্তায়।

ছোটবেলা থেকে তার কণ্ঠে জাদু ছিল। তাই এখন ট্রেনে আর স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষা করেন কাজলী। তার সুরেলা কণ্ঠের গান শুনে মুগ্ধ যাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সবাই বলছেন, সুযোগ পেলে তারকা শিল্পী হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে কাজলীর।

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দহপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে কাজলী খাতুন (২৯)। পাবনা-ঢাকা রেলপথের যাত্রীদের কাছে পরিচিত মুখ তিনি। ১৪ বছর ধরে বিভিন্ন ট্রেনে আর স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষা করে চলে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার।

মঙ্গলবার কাজলী খাতুনের খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, চাটমোহর রেলস্টেশনে ট্রেনে ওঠার অপেক্ষায় বসে আছেন। আর তাকে ঘিরে গান শোনার মানুষের জটলা। সবার অনুরোধে শুরু করলেন গান- ‘জীবন মানেই তো যন্ত্রণা, বেঁচে থাকতে বোধ হয় শেষ হবে না’। এ গান যেন তার জীবনের প্রতিচ্ছবি।

আলাপকালে কাজলী খাতুন জানান, ১৯৯১ সালে দহপাড়া গ্রামের এক অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় কাজলী। বাবা শহিদুল ইসলাম তেমন কাজ করতেন না। বাবার সঙ্গে তার মায়ের বনিবনা না হওয়ায় জন্মের দুই বছর পর বাবাকে ছেড়ে চলে যান তার মা রেহানা খাতুন। এরপর দাদির কাছে বড় হতে থাকেন। এর মধ্যে তিন বছর বয়সে হঠাৎ করে চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে নষ্ট হয়ে যায় তার দুই চোখ। আলো নিভে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

১০ বছর বয়স থেকে বাড়িতে খালি গলায় গুনগুন করে গান গাইতেন কাজলী। সেই গান শুনে প্রতিবেশিরা প্রশংসা করতেন। এরমধ্যে ১৫ বছর বয়সে এক ভিক্ষুকের সঙ্গে কাজলীর বিয়ে দেন স্বজনরা। তারপর সেই স্বামী সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন অন্ধ কাজলী। সেই থেকে ১৪ বছর ধরে পাবনা-ঢাকা রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনে আর স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষা করে চলছে তার জীবন।

বিয়ের ছয় বছরের মাথায় প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর গত ঈদুল আজহার সময় কাজলীকে বিয়ে করেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নয়নগাতি গ্রামের আলামিন হোসেন। প্রথম স্বামীর পক্ষে রয়েছে এক মেয়ে জাহিদা ও এক ছেলে খায়রুল।

কাজলী খাতুন জানান, তিনি রাস্তায় রাস্তায় আর ঘুরতে চান না। ভিক্ষাবৃত্তিতে থাকতে চান না। তিনি বাড়িতে বসে সন্তানদের নিয়ে দিন কাটাতে চান। নিজের জীবনের অন্ধকার ঘোচাতে চেয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা। সবার সহযোগিতা পেলে ভালো গান উপহার দিতে পারবেন বলে মনে করেন কাজলী। আমৃত্যু গান গেয়ে যেতে চান তিনি।

এদিকে, কাজলীর গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন অনেক যাত্রী। সোস্যাল মিডিয়ায় তার গানের ভিডিও আপলোড করেছেন কেউ কেউ। তেমনি একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

চাটমোহর স্টেশনে অপেক্ষামাণ একাধিক ট্রেনযাত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, কলকাতার রানু মন্ডলের মতো সুরেলা কণ্ঠ কাজলীর। এক গান গেয়ে রানু মন্ডল যদি ভিক্ষুক থেকে বিখ্যাত শিল্পী হতে পারে, তাহলে কাজলীর মাঝেও রয়েছে সেই সম্ভাবনা। সবাই যদি কাজলীর পাশে দাঁড়ায় তাহলে তার জীবন হয়ে উঠতে পারে আলোকময়।

চাটমোহরের সঙ্গীত শিক্ষক ওস্তাদ দেওয়ান জামিউল ইসলাম কাবলী অন্ধ কাজলীর গান শুনে বলেন, কাজলীর মাঝে প্রতিভা রয়েছে। গানের গলাও চমৎকার। লোকসঙ্গীতগুলো ভালো গাইতে পারেন কাজলী। এমন প্রতিভাকে অবহেলা নয়, বরং পরিচর্যা করে তুলে আনা দরকার। একটু প্রশিক্ষণ পেলে কাজলীর অন্ধকার জীবনে আলো ফুটতে পারে।

 

ঢাকা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়