ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পুরুষের পাশে সমান তালে চলছেন আদিবাসী নারীরা

মোসলেম উদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরুষের পাশে সমান তালে চলছেন আদিবাসী নারীরা

অঞ্জলী কুজুর আদিবাসী নারী। সকাল হতেই সংসার গুছিয়ে রওনা হন মাঠের দিকে। উদ্দেশ‌্য ধান বোনা।

এই ধান বুনে যে অর্থ তিনি আয় করেন তা ব‌্যয় করেন সংসারে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে হাতে যা থাকে তা দিয়ে ঘরবাড়ির উন্নয়নে ব‌্যয় করেন।

কখনো বা ভাল-মন্দ খাবার তুলে দেন প্রিয় মানুষগুলোর পাতে। ওরা পাতে তৃপ্তির ঢেকুর তুললে অঞ্জলীর মনে বয়ে যায় প্রশান্তির বাতাস। দিনাজপুরের হিলি উপজেলার উদয়গীরি গ্রামে স্বামী সন্তান নিয়ে তার বসবাস।

জানতে চাইলে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের কাছে একগাল মিস্টি হাসি নিয়ে অঞ্জলী কুজুর বলেন, ‘আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। সংসার সন্তানের চাহিদা মেটাতে দেওয়ানা (স্বামী) হিমশিম খাচ্ছে। তাই সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মাঠে ঘাটে কাজ করছি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মানুষের জমিতে কাজ করছি। এক বেলা খাবার দিয়ে ২৫০ টাকা হাজরা দিচ্ছে গৃহস্ত। অভাবের সংসারে একটু হিসেব করে চলতে হয়। ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটানোর জন‌্য এই কাজ করা।’

অঞ্জলী কুজুরের মতো এই এলাকার প্রায় প্রত‌্যেক আদিবাসী নারীই এমন নানা কজে নিয়োজিত আছেন। তারা যেমন পরিশ্রমী তেমনি সময়নিষ্ঠ। সংসারে তারা নীরবে অবদান রেখে চলেছেন। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে চলছেন এই নারীরা। অনেক সময় তারা পুরো সংসারের ভারও বহন করেন পরম নিষ্ঠায়।

তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়কে উপেক্ষা করে তাদের সংগ্রামী পথ চলা। সংসার, সন্তানের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে স্বামীকে সমানভাবে সাহায্যে করে চলেছেন নীরবে। বদলে ফেলছেন নিজের ভাগ‌্য। তাদের কর্মচেষ্টায় বলতে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।

চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে চারা রোপণ করতে দেখা যায় আরো কয়েকজন আদিবাসী নারীকে।

এক হাটু কাদার মধ্যে হাতে ধানের চারা নিয়ে রোপণ করছেন সেলিনা কুজুর। কথা হলে সেলিনা কুজুর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেওয়ানা (স্বামী) মোর এ্যানা কম জুরি।  খাটপা (কাজ করতে) কম পারে। ওমার কামে (তার কাজে) সংসার চলে না। সারাদিন পরিশ্রম করে যা পাও তাই দিয়ে এক ছেলে- দেওয়ানার মুখে অন্ন তুলে দ‌্যাও।’

বয়স্ক আদিবাসী নারী সেলিনা কিসপটা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ্যলা কাম হামার কেচু মনে হয় না বাহে। ছোটতেই হারা সব কাজ করবার পারি। ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তারা সবাই সবার মত আছে। হারা বুড়াবুড়ি মানুষের জমিতে আর বাড়িতে কামলা দিয়ে ভালই চলছি।’

দিনাজপুরের হিলির আদিবাসী নারীরা এভাবে কাজ করে নিজেদের ভাগ‌্য যেমন পাল্টাচ্ছেন তেমন দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে রাখছেন অগ্রণী ভূমিকা।

 

হিলি/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়