ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাবার গলা কেটে হত্যার পর নদীতে ফেলেছে ছেলে

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাবার গলা কেটে হত্যার পর নদীতে ফেলেছে ছেলে

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় সম্পত্তির মালিক হওয়ার লোভে হাজী ওমর আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলেছে তার ছেলে ও তার সহযোগীরা।

এঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা তার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।

আটক দুইজন হলেন- সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার নয়াগ্রামের এমাদ উদ্দিনের ছেলে মনির আহমেদ (৩০) এবং তার শাশুড়ি বিয়ানীবাজার থানার কালাইউড়া গ্রামের মৃত জুবেদ আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (৫৫)।

তারা আজমিরীগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব আহমেদ তালুকদারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি।

তবে পলাতক রয়েছেন নিহতের সন্তান মূল ঘাতক কাউছার আহমেদ। তিনি আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও এমসি কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।

স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ৬ জানুয়ারি কাউছার তার বাবা ওমর আলী নিখোঁজ হয়েছেন বলে আজমিরীগঞ্জ থানায় এক সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে উল্লেখ করা হয় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওমর আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পরবর্তীতে জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা আজমিরীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবু হানিফ বিভিন্ন সময় ছদ্মবেশে গিয়ে জানতে পারেন সাধারণ ডায়েরির পর থেকেই ওমর আলীর ছেলে কাউছার ঘরে থাকা গরু বিক্রয় করতে থাকেন। এছাড়াও জায়গা-সম্পত্তির কাগজপত্র হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে পুলিশের সন্দেহ হয় সাধারণ ডায়েরির বাদী তার বাবাকে হত্যা করে থাকতে পারে।

এদিকে গত ২১ জানুয়ারি বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ওই এলাকার সোনাই নদী থেকে মাথাবিহীন এক মরদেহের কঙ্কাল উদ্ধার করে। পরে ২৩ জানুয়ারি নিহতের ভাই নায়েব আলী বাদী হয়ে ঘাতক কাউছার আহমেদ (২০), নিহত ওমর আলীর স্ত্রী ও কাউছারের মা পিপি বেগম (৫৫), মেয়ে মমতা বেগম (৩০), অপর ছেলে আল-আমিন (২৫) ও ভাতিজা সাদেক মিয়াকে (৪৫) আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ নিশ্চিত হয়, নিহতের ছেলে কাউছার আহমেদ এবং তার সহযোগী মনিরসহ কয়েকজন ওমর আলীকে বিয়ানী বাজারে নিয়ে হত্যা করেছে। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে জকিগঞ্জ থেকে মনির ও তার শাশুড়ি ছুফিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন বুধবার ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন তারা।

স্বীকারোক্তিতে মনির ও সুফিয়া জানান, জায়গা-সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার লোভে কাউছার নিজের পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরবর্তীতে তিনি মনিরকে পাঁচ হাজার টাকা দেন এবং কয়েকজন মিলে মনিরের শ্বশুরবাড়ির বিয়ানীবাজারের কালাইউড়া গ্রামের এক জঙ্গলে নিয়ে গলা কেটে ওমর আলীকে হত্যা করেন। পরিচয় যাতে শনাক্ত না হয় সেজন্য মাথা অন্যত্র এবং নদীতে ফেলে দেয়া হয় মরদেহ।

গ্রেপ্তার দুইজন লাশের কাপর-চোপড় দেখে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

তিনি আরো জানান, কাউছারকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার পাঁচ আসামিসহ ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত রয়েছেন কি না এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম মিয়া, আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

মামুন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়