ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি, মৃত্যুর আগে তার কন্যাকে দেখতে চাই’

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি, মৃত্যুর আগে তার কন্যাকে দেখতে চাই’

বঙ্গবন্ধুকে কখনও স্বচক্ষে দেখিনি কিন্তু মৃত্যুর আগে একবারের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বচক্ষে দেখতে চাই আকুতি জানিয়েছেন মো. ইদ্রিস আলী তালুকদার।

মো. ইদ্রিস আলী তালুকদার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বহরবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশ বছরের সভাপতি।

দীর্ঘদিন ধরে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রাজনীতি করতে যেয়ে হামলা-মামলারও শিকার হয়েছেন একাধিকবার।

বছর চারেক আগে হঠাৎ অসুস্থতায় তার স্ত্রী মারা যান। তার কিছুদিন পর নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন আর আগের মত স্লোগান দিতে পারেন না। এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মীদের জড়ো করে মিটিং মিছিল করতে পারেন না।

কিন্তু দলের যেকোনো সভা সমাবেশের কথা শুনলে অসুস্থ অবস্থায়ও ভ্যান বা নৌকাযোগে চলে যান সেখানে। প্যান্ডেলের পাশে নিরবে বসে দলীয় কর্মকাণ্ড দেখেন। শেষ বয়সে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে একবার দেখার জন্য চোখের পানি ফেলেন এই সংগ্রামী নেতা। 

মো. ইদ্রিস আলী তালুকদার বলেন, ‘রেডিওতে তার ভাষণ শুনে বুঝতে পারি বাংলার মানুষের ভাল থাকতে হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই।

স্বাধীনতার পূর্বে সেই যুবক বয়সেই শুরু করি আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সংসার, ছেলে মেয়ে কারও দিকে কোনো খেয়াল করিনি।

১৯৭৫ সালে কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যদের হাতে বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়েও দলের সঙ্গে ছিলাম। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও দলের দায়িত্বে ছিলাম। বয়সের কারণে এখন আর দলের তেমন কোন কাজে আসতে পারি না। কিন্তু মৃত্যুর আগে একবারের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার স্বচক্ষে দেখতে চাই।’ এই কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

মো. ইদ্রিস আলী তালুকদারের একমাত্র ছেলে শিক্ষক টিএম জহিরুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘বাবা সারাজীবন রাজনীতি করেছেন। আমাদের কোন আবদার ছিল না বাবার কাছে। রাজনীতি করে তিনি কী পেয়েছেন!আমরা কী পেয়েছি সে হিসেবে কখনও করিনা। শিক্ষকতা করে জীবন চালাই। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে বাবা যখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার কথা বলে হাওমাউ করে কেঁদে ওঠেন আমাদের সামনে, তখন বুক ফেটে যায় কষ্টে। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কিছু চাই না শুধু বাবাকে একবার তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেবার দাবি জানাই।’

আরেক সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খালিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পরে সব সময় বাবার খেয়াল রাখি। বাবার চাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করি। আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করাও এই বলে যখন বাবা কাঁদতে থাকে তখন খুব কষ্ট হয়।’

বহরবুনিয়া ইউনয়িন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ হাওলাদার বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন ইদ্রিস আলী তালুকদার।  ১৯৯০ সাল থেকে তিনি এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে তিনি সফলভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বয়সের ভারে তিনি এখন আর দলীয় কাজ করতে পারেন না।।কিন্তু এই দলের জন্য তার অবদান রয়েছে। অনেক হামলা মামলার শিকার হয়েছেন তিনি। বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন মারা গেছেন। এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন এখন আমাদের অভিভাবক। তার কাছে আমরা দাবি জানাই, তিনি যেন দলের এই ত্যাগী নেতা ইদ্রিস আলী তালুকদারকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মো. ইদ্রিস আলী তালুকদার দলের জন্য অনেক করেছেন। এখন তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। বৃদ্ধ ও আর্থিক সংগতি না থাকায় উপজেলার অনেক ত্যাগী নেতা এভাবে নীরবে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। এ ধরণের ত্যাগী নেতাদের একটু সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই দলের নেতাদের কাছে।’

আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা বৃদ্ধ মো. ইদ্রিস আলী তালুকদার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ছয় মেয়ে ও এক ছেলে আমার। রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের ভালভাবে দেখভালও করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আল্লাহ আমাকে দেয়নি। মৃত্যুর আগে একবারের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই। এছাড়া এই পৃথিবীতে আমার চাওয়ার কিছু নেই।’

 

বাগেরহাট/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়