ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাবদিয়া বাওড় এখন দখলদারদের!

রাজিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৪ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাবদিয়া বাওড় এখন দখলদারদের!

বাওড়ের নাম ভাবদিয়া। বাওড়টি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে। গাড়াপোতা  আর ভাবদিয়া এই দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বাওড়টি ।

৪২ একর ৭ শতক সরকারি জমি রয়েছে এই বাওড়ে। এই বাওড়টি দিয়ে পার্শ্ববর্তী ৩২৬টি মৌজার মাঠের পানি বড়বিল হয়ে কোদলা নদীতে নেমে যেতো। বর্তমানে বাওড়ে বড় বড় পুকুর কাটা হয়েছে। দুই গ্রামের অর্ধশত ব্যক্তি এই পুকুরগুলো কেটেছেন। সেখানে তারা মাছের চাষ করেন। এই পুকুর কাটার কারণে এখন আর বাওড়ে স্রোত বয়ে যায় না। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাঠে পানি জমে। এতে কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে যায়।

অভিযোগ উঠেছে,  ভাবদিয়া বাওড়ের পুরো জমিই সরকারের হাত ছাড়া হতে চলেছে। ইতোমধ্যে এই জমির পুরোটাই বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। এমন কি তা ছাপা পরচা তৈরির জন্যও পাঠানো হয়েছে।

সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা একাধিক মামলা করেও এই জমি রক্ষা করতে সমর্থ হননি, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে স্থানীয়রা বলছেন, কর্মকর্তা মামলা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। অদৃশ্য কারণে কর্মকর্তারা মামলায় কোনো ভূমিকা রাখেন না।

আর দলখদাররা বলছেন জমিটি এক সময় সরকারি বাওড় ছিল। তারা চাষাবাদ করে আসছিলেন। এরপর আর.এস রেকর্ডের সময় তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। সরকার দখল নিলে তারা ছেড়ে দেবেন।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবদিয়া বাওড়টি সরকারি বাওড়। এই বাওড়ে ৪২.০৭ একর জমি আছে। ৬২১ দাগের এই জমিটি আর.এস রেকর্ডে প্রায় ৭১ জনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। বিষয়টি ভূমি অফিসের নজরে আসলে রেকর্ড সংশোধনের মামলা দেওয়া হয়। বর্তমানেও ৭১টি মামলা চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, বাওড়ের জমি ব্যক্তি মালিকের নামে যাওয়ার সুযোগ নেই। ছাপা পরচা আসার পরও জমি ফেরত নেওয়া সম্ভব।

ভাবদিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর বেলাল হোসেন বলেন, ‘দেখতে দেখতে বাওড়টি বেদখল হয়ে গেল। এই বাওড় দিয়ে ৩২৬ মৌজার মাঠের পানি বের হতো। যা পুকুর কাটার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘দুই গ্রামের মানুষগুলো বাওড়ের জমি দখল করেছে। প্রথমে তারা বাওড়ের পাড়ে চাষাবাদ শুরু করে। এরপর পুকুর কাটতে থাকেন। আনুমানিক ২৫ বছর পূর্বে এই পুকুরগুলো কাটা হয়। অল্প দিনেই অসংখ্য পুকুর তৈরি হয়ে যায়। এভাবে গোটা বাওড়ের জমি সরকারের দখল থেকে দখলদারদের কবলে চলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘দখলদাররা জমি দখলে রাখার পর আর এস রেকর্ডের সময় রেকর্ড কর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। সেই থেকে তারাই জমির মালিক বলে প্রচার করছেন। সরকারের কোনো জমি এখানে নেই বলে বলা হচ্ছে।’

গাড়াপোতা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, এক সময় তারা বাওড়ে মাছ ধরতে নামতেন। মাছ ধরার উৎসব চলতো। দেশীয় সব মাছ পাওয়া যেতো। বাওড় পাড়ের মানুষের মাছ ক্রয় করে খেতে হতো কম। আবার অনেকে এই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। যা এখন ভাবলে স্বপ্নের মতো মনে হয়। 

এ ব্যাপারে দখলদারদের একজন আব্দুল হক জানান, জায়গাটি বাওড়ের ছিল। তারা প্রথমে বাওড়ের ধারে চাষাবাদ করতেন। কিছু জমি ভূমিহীনদের নামেও বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে তারা ভূমিহীনদের নিকট থেকে ক্রয় করেন। এভাবে তারা জমির মালিক হয়েছেন। বর্তমানে তারা ওই জমিতে পুকুর কেটে চাষাবাদ করছেন।

তিনি আরো জানান, আর.এস রেকর্ডে জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে জমি তাদের দখলে আছে। সরকার সকলের দখল থেকে বাওড়ের জায়গা ফেরত নিলে তিনিও ছেড়ে দেবেন। তিনি অবশ্য স্বীকার করেন এই বাওড়ের উপর দিয়ে বড় বিলের পানি কোদলা নদীতে যেতো। এখন আর পূর্বের মতো পানি হয় না। ফলে বিলের পানি বেশিদিন জমে থাকে না।

বাওড়ে পুকুর আছে এমন আরেকজন মোমেনা খাতুন জানান, জমিটি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। তারাই এই জমির মালিক।

আরেক দখলদার নাম প্রকাশ না করে জানান, এভাবে বাওড় দখল হয়ে যাবে সেটা তিনিও চাননি। কিন্তু সকলে দখল করছে দেখে তিনিও করেছেন। তবে বাওড় তার পূর্বের জায়গায় ফিরে যাবে এটা তিনিও প্রত্যাশা করেন।

 

ঝিনাইদহ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়