ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পদ্মায় নৌকাডুবি: আরো ৪ লাশ উদ্ধার, কনের সন্ধান মেলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পদ্মায় নৌকাডুবি: আরো ৪ লাশ উদ্ধার, কনের সন্ধান মেলেনি

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বর-কনে ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় আরো চারজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে এখনো কনেসহ তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

শুক্রবার (০৬ মার্চ) সন্ধ্যায় বরের বাড়ি থেকে ফেরার সময় ৪৫-৫০ জন যাত্রী নিয়ে মাঝপদ্মায় নৌকা দুটি ডুবে যায়। শনিবার (০৭ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে শনিবার বিকেলে চারজন, সকালে একজন এবং নৌকাডুরি পর একজনের লাশ উদ্ধার হয়।

দিনভর স্বজনরা ঘটনাস্থল রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় নিখোঁজদের সন্ধানে অপেক্ষায় ছিলেন। সবাই শোকে স্তব্ধ।

নৌকাডুবির পর বর রুমন আলী (২৪) বেঁচে গেলেও নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণির (১৬) এখনো সন্ধান মেলেনি। তাকেসহ তিনজনের সন্ধানে এখনো  অভিযান অব্যাহত রেখেছেন ডুবুরিদলের সদস্যরা।

ছোট নৌকা এবং অদক্ষ মাঝি নৌকাডুবির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন দুর্ঘটনা অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, একটি নৌকার মাঝি ছিল কিশোর। আরেকটি নৌকার মাঝিরও দক্ষতার অভাব ছিল। ছোট নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। এ সব কারণে নৌকাডুবি হয়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন।

নৌকাডুবিতে মারা যাওয়ারা হলেন- পবা উপজেলার ডাঙেরহাট এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে শামীম হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী মনিকা (৪০) এবং তাদের মেয়ে রোসনি (৭), মহানগরীর উপকণ্ঠ বসুয়া এলাকার আবদুল গাজীর ছেলে রতন আলী, তার মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৬), হড়গ্রাম ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকার আসলাম উদ্দিনের ছেলে এখলাক হোসেন (২৪)।

নববধূ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন তার ফুপাতো বোনের মেয়ে রুবায়েত (৮) এবং খালা আঁখি খাতুন।

নৌকাডুবির কারণ অনুসন্ধানে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে।

পূর্ণির দুলাভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের কৃষক শাহিন আলীর নবম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে পূর্ণির সঙ্গে মাস দেড়েক আগে পদ্মার ওপারের চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে রুমন আলীর বিয়ে হয়।

তিনি জানান, শুক্রবার বরের বাড়িতে বৌভাতের আয়োজন করা হয়। কনেপক্ষের স্বজনরা বৌভাত শেষে বর-বধূকে নিয়ে এপারে ফিরছিলেন। এ সময় দুটি নৌকায় ৩৫ জনের বেশি ছিলেন। পদ্মায় দুটি নৌকার মধ্যে দূরত্ব ছিল এক কিলোমিটার।

একটি নৌকায় ছিলেন তারিকা খাতুন (১৮)। তিনি জানান, তাদের নৌকায় বর-বধূসহ অন্তত ২৮ জন ছিলেন। নদীতে বাতাস ছিল। আকাশে কালো মেঘ ছিল। হঠাৎ নৌকার নিচ থেকে পানি উঠতে শুরু করে। তখন পুরুষরা নদীতে নেমে নৌকা ধরে সাঁতার কাটছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। এক পর্যায়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তখন একটি বালুবাহী ট্রলার তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে।

পেছনের আরেকটি নৌকায় ছিলেন কনের মামা মাসুদ রানা (৩৫)। তিনি জানান, তাদের নৌকায় ২২-২৩ জন ছিলেন। মাঝপদ্মায় নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর নৌকার তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করে। তারাও ডুবতে শুরু করেন। এ সময় অদূরে থাকা ছোট নৌকা এগিয়ে আসে। তারা সাঁতরে ওই নৌকায় গিয়ে ওঠেন। কিন্তু দুইজন উঠতে পারেননি।


তানজিমুল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়