বর্জ্যে দূষিত তুলশীগঙ্গা
মো. শামীম কাদির || রাইজিংবিডি.কম
জয়পুরহাটের বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন কারখানা ও জামালগঞ্জের প্রায় ১০ হাজার পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে তুলশীগঙ্গা নদী। ডিমের খোসা, মরা মুরগিসহ অন্যান্য বর্জ্য নর্দমার মাধ্যমে গিয়ে পড়ছে ওই নদীতে। নদীর দুর্গন্ধযুক্ত কালচে পানি এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখে গেছে, প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল দিয়ে জয়পুরহাট জেলা শহরের আবাসিক এলাকার বর্জ্য ও পানি অপসারিত হয় আক্কেলপুরের সোনামুখি এলাকার তুলশীগঙ্গা নদীতে। এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে জয়পুরহাট চিনিকল, বিসিক শিল্পনগরী এবং জামালগঞ্জের পোল্ট্রি খামার ও হ্যাচারির বর্জ্য অপসারণের নর্দমা। আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি। এটি বিভিন্ন স্থানে সরু নর্দমায় পরিণত হয়েছে। পুরো খালই আবর্জনায় ঠাসা।
খালের মধ্যে দেখা গেছে অসংখ্য ডিমের খোসা, মরা মুরগি আর আবর্জনার স্তূপ। তার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে পৌরসভার বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন কারখানার অপসারিত পানি।
খালটির ওপর জামালগঞ্জ বাইপাস সড়ক সেতু, জয়পুরহাট-আক্কেলপুর আঞ্চলিক সড়কের জামালগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ মোড় এলাকার সেতু, জিয়াপুর প্রাথমিক স্কুল সংলগ্ন সেতু ও রাজকান্দা সেতু এলাকায় দেখা গেছে, বর্জ্যের স্তূপ। প্লাস্টিকের বস্তায় করে খালের ওপরেই ফেলা হয়েছে মরা মুরগি, পচা ডিম। একদল কুকুরকে দেখা গেছে বর্জ্য নিয়ে টানাটানি করতে। বর্জ্যের কারণে পানি কালো রঙ ধারণ করেছে।
জামালগঞ্জ এলাকার কৃষক শাহাদত হোসেন, আব্দুর রহিম ও মোজাম্মেল হক বলেন, প্রায় প্রতিদিনই মুরগির খামার থেকে বর্জ্য ফেলা হয় খালে। কখনো মরা মুরগি, কখনো পচা ডিম খালে ফেলার কারণে ভীষণ দুর্গন্ধ হয়।
একই এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, খালে বিভিন্ন বর্জ্য ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে এই পানি ব্যবহার করলে ফসল নষ্ট হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করার পর ইদানিং জামালগঞ্জ বাইপাস সড়ক সেতুর নিচে পোল্ট্রি বর্জ্য ফেলা বন্ধ হয়েছে।
জামালগঞ্জ বাজারের শেফালী পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘মুরগির বর্জ্যে তুলশীগঙ্গা নদী দূষিত হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ, মুরগির বর্জ্য ডাম্পিং করা হয় নিজস্ব জায়গায়। আর পানি ফেলা হয় নিজস্ব পুকুরে।
তাহলে খালের বিভিন্ন স্থানে মুরগির বর্জ্য আসছে কোথা থেকে? এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তর দিতে পারেননি।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘নদী ঘুরাও নদীর পথে’ এর জয়পুরহাট জেলা শাখার সভাপতি আজিজুল হক বিশ্বাস বলেন, জয়পুরহাট বিসিক শিল্প নগরীর কল-কারখানার ময়লা পানি এবং জামালগঞ্জ এলাকার হাজার হাজার পোল্ট্রি খামার ও হ্যাচারির বর্জ্যে তুলশীগঙ্গা নদী দূষিত হচ্ছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় নদীদূষণ রোধে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, পরিবেশদূষণ রোধে পোল্ট্রি ও হ্যাচারি শিল্পের বর্জ্য ডাম্পিং করতে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের চেষ্টা চলছে। তুলশীগঙ্গা নদীর পানি হঠাৎ কালচে রঙ ধারণ করার বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হবে।
জয়পুরহাট/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন