ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে লোক সমাগমের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন আয়োজকরা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ১৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লক্ষ্মীপুরে লোক সমাগমের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন আয়োজকরা

‘করোনা’ থেকে মুক্তিতে দোয়া মাহফিলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। প্রথমে সেটি না মেনে অনুমতি ছাড়া গণজমায়েত করলেও পরে বুঝতে পেরে এজন্য আয়োজক কমিটি ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আরএম কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে বুধবার (১৮ মার্চ) এ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে খতমে শেফা, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহে জামে মসজিদের খতিব ও আওলাদে রাসূল (সা.) সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবীরি আল মাদানী দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাজী জামসেদ কবির বাকী বিল্লাহ, হায়দরগঞ্জ আরএম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল আজিজ মজুমদার, সাইয়্যেদ মোহাম্মদ তাহের জাবেরী, সাইয়্যেদ জায়েদ জাবেরী, সাইয়্যেদ মাহবুব জাবেরীসহ অন্যান্যরা।

এদিকে মূহুর্তের মধ্যেই দোয়া ও মোনাজাতের সে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সর্বত্র শুরু হয়ে যায় আলোচনা-সমালোচনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য সাইয়্যেদ মোহাম্মদ তাহের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গণজমায়েত নয়, ‘সাইয়্যেদ মঞ্জিল’ দরবার শরীফে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খতমে সেফা ও দোয়া মোনাজাত করতে চেয়েছেন। কিন্তু, খবর পেয়ে প্রায় ৫০ হাজার ভক্ত সে দোয়া মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।’

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। ভয়ের কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যিনি রোগ দিয়েছেন, তাঁর কাছে সেটি থেকে রক্ষা পেতে ক্ষমা চেয়ে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে। তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন।’ 

টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হারুন আল মাদানী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে রোগ দেন, সে রোগ থেকে মুক্তির জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে লোকজন জড়ো হয়েছে। তাছাড়া জুমার নামাজেও হাজার হাজার মুসুল্লি অংশ নেয়।’

রায়পুর থানার ওসি মো. তোতা মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লোক সমাগমের জন্য কেউ আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। পরে বিষয়টি জেনেছি। ধর্মপ্রাণ মানুষ আবেগের জায়গা থেকে জড়ো হয়ে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিয়েছে।’

লোক সমাগমের বিষয়টি নিশ্চিত করে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনুমতি না নিয়ে কাজটি করেছেন আয়োজক কমিটি। পরবর্তিতে গণজমায়েতের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তারা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এরকম কাজ না করার লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।’

সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য জেড এম ফারুকী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রোগমুক্তির জন্য দোয়া ঘরে বসেও করা যেতো। সেটি না করে বিপুলসংখ্যক মুসিল্লির জমায়েত করাটি ঠিক হয়নি। জমায়েতে কোনো বিদেশফেরত করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি অংশ নিয়ে থাকেন তাহলে তাঁর মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এটি ছোঁয়াচে রোগ।’ 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা উপ-পরিচালক আশিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। রোগ মুক্তির জন্য মসজিদের ভেতরে দোয়া ও মোনাজাত করার জন্য আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। তবে এই রকম পরিস্থিতিতে এত বড় জমায়েত ঠিক হয়নি।’

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গতকাল রাতে করোনা ভাইরাস ও গণজমায়েতের বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভা করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত সবাই অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’

তবে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

 

ফরহাদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়