ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘গোলা’ এখন আর দেখা যায় না

রাজিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৪, ২২ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘গোলা’ এখন আর দেখা যায় না

একটা সময় ছিল গ্রামে গৃহস্থের বাড়িতে পুকুরভরা মাছ, আর গোলাভরা ধান দেখা যেতো। এগুলো কৃষকের মর্যাদার বিষয় ছিল। যে কৃষকের বাড়িতে যত বেশি দেখা যেতো, তাকে তত ধনী এবং সম্ভ্রান্ত বিবেচনা করা হতো।

গ্রামাঞ্চলে এখন পুকুরভরা মাছ থাকলেও ধান রাখার জন্য ‘গোলা’ দেখা যায় না। কৃষকরা এখন গোলায় ধান রাখে না, বস্তায় ভরে গুদামজাত করে। এই প্রজন্মের অনেকে গোলা কী তা জানেই না।

গোলা বাঁশের তৈরি বৃত্তাকার ঘরের মতো। ছাউনিতে খড় ব্যবহৃত হয়। তবে অনেকে টিন দিয়েও ছাউনি দেন। 

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভবনগর গ্রামের প্রায় বাড়িতে গোলা দেখা যেতো। সেই গোলায় ধান ভরে দীর্ঘ দিন রাখতো কৃষকরা। সেখান থেকে প্রয়োজনমতো বিক্রি অথবা সংসারের জন্য বের করতো। এখন গোলা তেমন দেখা যায় না। আবার অনেক বাড়িতে  গোলা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনগর গ্রামে অর্ধশতাধিক বাড়িতে গোলা রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পশ্চিমপ্রান্তে একটি বাড়িতে চারটি গোলা; যার মালিক আমির হোসেন তরফদার। এর পাশে ঝন্টু মন্ডলের বাড়িতে আরেকটি গোলা। কিছুটা দূরে আমজাদ তরফদারের বাড়িতে রয়েছে আরো দুটি গোলা। আরেক পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও একাধিক বাড়িতে গোলা রয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা ঝন্টু মন্ডল জানান, তাদের গ্রামে এখনো অর্ধশত বাড়িতে গোলা রয়েছে। এ সব গোলায় ধান রাখা হতো। কিন্তু এখন তেমন কেউ গোলায় ধান রাখে না। অধিকাংশ গোলা পরিত্যক্ত পড়ে আছে।

ভবনগর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, একটি গোলা তৈরি করতে কৃষকের ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। যেগুলোতে ১৫০ থেকে ২৫০ মণ ধান রাখা যায়।

তিনি জানান, ভবনগর গ্রামে ৫ শতাধিক পরিবার বসবাস করে। লোকসংখ্যা তিন হাজার। এই গ্রামের কৃষকরা সহস্রাধিক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতো। এখন চার শত বিঘা জমিতে চাষ করে। তিনি নিজেও ধান গোলায় রাখতেন, এখন আর রাখেন না। গোলাটি পড়ে আছে।

তিনি জানান, তিনিও ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া ধান কাটার পর পরই বিক্রি করে দেন। তাই গোলার প্রয়োজন হয় না। তার গোলাটিও পড়ে আছে।

আরেক কৃষক শাহাজউদ্দিন জানান, ১৯৭৭ সালের পর তাদের গ্রামে ব্যাপকহারে ধান চাষ শুরু হয়। এরপর গ্রামের মানুষ ধান রাখতে গোলা তৈরি শুরু করে। সেই থেকে এখানে গোলার প্রচলন।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমানুল্লাহ জানান, গোলায় ধান রাখা কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ। কিন্তু গোলা হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন থাকবে না।  

 

ঢাকা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়