ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

থানায় আসামির মৃত্যু, ওসি বরখাস্ত

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
থানায় আসামির মৃত্যু, ওসি বরখাস্ত

বরগুনার আমতলী থানায় হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন এক আসামির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহষ্পতিবার (২৬ মার্চ) ভোরে থানা হাজতে মারা যান শানু হাওলাদার নামে ওই আসামি। সোমবার (২৩ মার্চ) রাতে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাবাদের নামের থানায় আটক রাখার তিন দিন পর মৃত্যু হয় তার।

শানুর মৃত‌্যু নিয়ে তার স্বজন ও পুলিশ দুই রকম কথা বলছেন। পুলিশের দাবি, শানু থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষের ফ্যানের সাথে রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেছে। তবে স্বজনদের দাবি, গ্রেপ্তারের পর বিপুল অংকের টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা না দেওয়ায় শানুকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ।

নিহতের পারিবার সূত্র জানায়, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত বছর ৩ নভেম্বরে ইব্রাহিম নামের একজন কৃষক খুন হন। ওই হত্যা মামলায় শানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি।

নিহতের ছেলে সাকিব হাওলাদার জানান, ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় তার বাবা শানু হাওলদারকে গত সোমবার রাতে সহেন্দভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে আমতলী থানা পুলিশ। পরে ছেড়ে ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্ত ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বাবার ওপর নির্যাত চালায় পুলিশ। এক পর্যায়ে বাবাকে পুলিশের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে মঙ্গলবার ওসি আবুল বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেন সাকিব। তাতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় নির্যাতনও বন্ধ হয়নি।

এদিকে খবর পেয়ে বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন পিপিএম আমতলী থানায় যান। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম।

এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাৎক্ষণিক বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। নিহত শানু হাওলাদারের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আসামি শানু হাওলাদার বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬ টার দিকে ওয়াশ রুমে যাওয়ার কথা বলে। সেখান থেকে ফিরে এক ফাঁকে হাজত খানার ফ্যানের সাথে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।’

হাজত খানায় কোনো ফ্যান নেই, তিনি কীভাবে সেখানে আত্মহত‌্যা করলেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি কথা পাল্টে বলেন, ‘ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জনের কক্ষে ফ্যানের সাথে রশি পেঁচিয়ে আত্মত্যা করেছেন।’

বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন পিপিএম বলেন, ‘এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধী যেই হোক, নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


রুদ্র রুহান/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়