ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রিকশার সঙ্গে অচল তাদের সংসারের চাকা!

আল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিকশার সঙ্গে অচল তাদের সংসারের চাকা!

মা, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীসহ ১০ সদস্যের পরিবার। সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আজির উদ্দিন।

প্রতিদিন তিন চাকার রিকশা চালিয়ে পরিবারকে সচল রাখতেন তিনি। এছাড়া দুই মেয়ে এক ছেলেকে লেখা পড়াও করাচ্ছেন। রিকশা চালানোর উপার্জনে টেনেটুনে চলছিল আজির উদ্দিনের সংসার।

হঠাৎ মহামারি করোনাভাইরাস এসে সবকিছু উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে তার। গত এক সপ্তাহ ধরে রিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রী না থাকায় উপার্জন নেই। এমনকি সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়ে নিজের দুপুরের খাবারই রোজগার করতে পারেন না তিনি।

বলছিলাম সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মঈনপুর গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক আজির উদ্দিনের কথা।

শনিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সামাজিক সংগঠন ‘বিশ্বজন’-এর আয়োজনে প্রতিদিন দুপুরের একবেলা ভাত খাওয়া কার্যক্রমে কতোগুলো ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে খাবার খেতে দেখা যায় তাকে।

এসময় আজির উদ্দিন বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করি তা দিয়ে সংসার চলতো। প্রতিদিন তিনশত টাকা থেকে ৫০০ টাকা রোজগার হতো। অসুস্থ মা, বউ, বাচ্চা নিয়ে ১০ সদস্যের পরিবার। সংসারে চার মেয়ে ও তিন ছেলে। দুই ছেলে সবার ছোট। বড় ছেলের বয়স ১৪। লেখা পড়া না করাতে শহরের একটি হোস্টেলে চাকুরি করতো। কিন্তু করোনার কারণে হোস্টেলও বন্ধ দিয়েছে মালিক। ছেলের মাসের বেতন আর রিকশা চালানোর টাকায় ভালোই চলছি সংসার কিন্তু এখন ছেলেও বেকার আর করোনার কারণে রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলেই পুলিশ বলে ঘরে যাও। নিরাপদে থাকো। ঘরে গিয়ে খাবো কী? ঘরে না হয় আমরা না খেয়ে থাকবো কিন্তু সন্তানদেরকে কী খাওয়াবো। ঘরে অসুস্থ মা আছে তাকে কীভাবে চিকিৎসা করাবো। চিন্তায় মাথায় কাজ করে না।’

তিনি আরোও বলেন, ‘সরকার যে ত্রাণ দেয় তা আমর মতো গরীবের জন্য নয়। জেলা শহরেরই মানুষই ত্রাণ পায়, গ্রামে ত্রাণ নিয়ে যায় না কেউ। গরীব হয়ে আমরা মরছি।’

আজির উদ্দিনের মতো এলাকায় আরোও অনেক রিকশাচালক আছেন। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের টুকেরগাঁও গ্রামের আব্দুল আলীম, শহরতলী মাইজবাড়ী গ্রামের রিক্সা চালক বরকত আলী, দোপাখালী এলাকার আলমগীর, হাছননগর এলাকার বাসিন্দা রেজা মিয়ারও একই অবস্থা। করোনা তাদের সচল সংসারকে অচল করে দিয়েছে। 

এদিকে, সামাজিক সংগঠন বিশ্বজনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন শতাধিক মানুষকে দুপুরে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি তাদেরকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অর্থ দিয়ে সহযোগিতাও করা হয়।

তাই এখনে দুপুরের খাবার ও সহযোগিতা পেয়ে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষগুলো বেশ খুশি।

রিকশাচালক টুকেরগাঁও গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন,‘ রিকশা চালিয়ে দৈনিক যে টাকা পাই সে টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলতো। করোনার কারণে এখন রাস্তায় আগের মতো মানুষ নেই। রুজি রোজগারও নাই। কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে। রাস্তায় বের হলে প্রশাসন রিকশা চালাতে দেয় না। একদিন রিকশা না চালালে পরিবার নায়ে না খেয়ে থাকতে হয়। খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।’ 

সামাজিক সংগঠন বিশ্বজনের সভাপতি কর্ণবাবু দাস বলেন,‘আমরা ছিন্নমূল, রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীসহ শতাধিক মানুষকে প্রতিদিন দুপুরে এক বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছি। গত ২৬ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত এক বেলা খাওয়ানোর এই কার্যক্রম চলছে। মহামারি করোনা যতদিন পর্যন্ত থাকবে তথদিন আমাদের সংগঠনের এই কার্যক্রম চলবে।’

তিনি আরোও বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের এখানে ১০০ থেকে ১২০ জন দিনমজুর, রিকশাচালক থেকে শুরু করে পথচারীরা এসে খেয়ে যান। অনেক রিকশাচালক দুবেলা তিনবেলা না খেয়ে আছেন। এরকম অনেকে এখানে এসে খেয়ে যান। দুপুরে ভাতের সঙ্গে মোরগের মাংস এবং ডাল খাওয়ানো হয়।  এতেই সবাই খুশি।’

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থির কারণে সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও সমস্যায় পড়েছেন। তবে নিম্মআয়ের মানুষরা আছেন সবচেয়ে সংকটে। এসব দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে সরকারসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের দাঁড়ানো উচিত।’

 

সুনামগঞ্জ/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়