ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নরসুন্দররা ভালো নেই...

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নরসুন্দররা ভালো নেই...

ভালো নেই সিলেটের নরসুন্দররা। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে তাদের পেশায়ও। বন্ধ রয়েছে সেলুন, বেশিরভাগ সেলুনের কারিগররাও চলে গেছেন বাড়িতে।

নগরের বন্দরবাজারে সিলেট হেড পোস্ট অফিসের সামনের মার্কেটের ‘মা হেয়ার ড্রেসার'। এই সেলুনে কাজ করতেন ৬ নরসুন্দর। গত ২৫ তারিখের পর থেকে সেলুন বন্ধ। এ কারণে সেলুনের সত্ত্বাধিকারী ছাড়া সব কর্মচারীই বাড়িতে চলে গেছেন। মুঠোফোনে কথা হয় সত্ত্বাধিকারী সঞ্চিতের সাথে।

সঞ্চিতে বলেন, ‘খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। দোকান ভাড়া হিসেবে দোকান মালিককে প্রতিমাসে দিতে হয় ১৮ হাজার টাকা। একই সাথে বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন খরচও আছে। কিন্তু গত ২৫ তারিখের পর থেকে সেলুন এক মিনিটের জন্যও খোলা হয়নি। আর ঝুঁকি নিয়ে খুলেও লাভ নেই, কারণ নগরের প্রধান এলাকা বন্দরবাজারে কেউ এ সময়ে চুল কাটতে আসবেনও না।’

তিনি জানান, খোলা থাকলে সিরিয়াল নিয়েই চুল কাটতে হয় তার সেলুনে। তাই অর্থাভাবেও পড়তে হয়নি কখনো। এখন সেলুন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মচারীরা সকলেই বাড়ি চলে গেছেন। তিনি শহরে রয়েছেন। কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন। তারা মূলত কাজ করলেই টাকা পান। কিন্তু সেলুন বন্ধ থাকায় তার কাছে থাকা জমা টাকাও শেষ হয়ে গেছে। কারও কাছ থেকে ধার করে আনবেন সেটুকুও পাচ্ছেন না। কারণ তার মতো অবস্থা প্রায় সকলেরই।

জল্লারপার রোডের ‘সেবা হেয়ার ড্রেসার'। এই সেলুনও বন্ধ রয়েছে ২৬ তারিখ থেকে। সেলুনের ম্যানেজার জানালেন, সেলুন বন্ধ। খোলার সরকারি নির্দেশনা আসা পর্যন্ত তারা খুলবেন না। কিন্তু টানা বন্ধ থাকায় তারা খুবই অর্থকষ্টে আছেন।

একই কথা বললেন, টিলাগড়ের ‘উত্তর হেয়ার ড্রেসার' এর মালিক উত্তম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক কাস্টমার আছেন যারা অন্য কোথাও চুল কাটতে যান না। এখন তারা ফোন করতে জানতে চান কখন সেলুন খোলা হবে। তারা কখন কাজ করাতে পারবেন। কিন্তু আমরা তাদের কোন সদুত্তর দিতে পারছি না। বলে দিচ্ছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দোকান খোলা হবে।’
 


সিলেট মহানগর সেলুন মালিক সমিতির তথ্য অনুসারে শুধুমাত্র নগর এলাকায় ৪ শতাধিক সেলুন রয়েছে। এর বাইরে জেলার সবকটি উপজেলা মিলিয়ে আরও তিন হাজারেরর বেশি সেলুন আছে। এসব সেলুনে কাজ করেন প্রায় ১৫ হাজারের অধিক নরসুন্দর। করোনা ভাইরাসের কারণে তারা এখন কর্মহীন। বেশ অর্থকষ্টে জীবন কাটছে তাদের।

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার চতুল বাজারে ১২টি সেলুন রয়েছে। প্রতিটি সেলুনেই ৫ থেকে ৬ জন কর্মচারী কাজ করেন। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই সবকটি সেলুন বন্ধ রয়েছে। দু’য়েকটি সেলুনে সাটার ফেলে কাজ করলেও তাতে চুল কাটতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা।

হবিগঞ্জের কয়েকজন নরসুন্দর এই বাজারে সেলুন চালু করেন কয়েক বছর আছে। দোকানের নামও দিয়েছেন ‘হবিগঞ্জ হেয়ার ড্রেসার’। দোকান বন্ধ থাকায় মুঠোফোনে তাদের একজনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘সেলুন বন্ধ থাকায় বাড়িতে এসেছি। কবে আসব বলতে পারছিনা। হাতে যে টাকা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে।'

কাজ না থাকায় তারা খুব অর্থকষ্টে পড়েছেন বলেও জানান।

‘পড়শী হেয়ার কাটিং' এর সত্ত্বাধিকারী পিংকু চন্দ বলেন, ‘আমরা কাজ করলে টাকা পাই। কাজ না করলে টাকা পাই না। সাধারণত সিরিয়াল ধরেই সেখানে চুল কাটতে হয়। সেজন্য সেলুন খোলা থাকলে কর্মচারীসহ সবাইকে টাকা দিয়েও বেশ আয় হয়। তবে সেলুন বন্ধ তাই কোন আয় নেই। টাকাও পাচ্ছিনা। খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।’

 

সিলেট/ নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়