ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে লোক সমাগম-আড্ডা কমছে না

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোপালগঞ্জে লোক সমাগম-আড্ডা কমছে না

করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কড়াকড়ি চললেও এখনো সচেতন নয় গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ। অনেকেই সরকারি নির্দেশনা মানছেন না।

গ্রাম থেকে শহরের রাস্তায়, পাড়ায়-মহল্লায়, হাট-বাজারে সেই আগের মতই লোক সমাগম হচ্ছে। চায়ের দোকানগুলোতে চলছে আড্ডা আর গল্প।

অন্যদিকে অভাবের কারণে শ্রমিক ও দিন মজুরেরা কাজের খোঁজে ঘর থেকে বের হচ্ছে। পেটের দায়ে বিভিন্ন জমি, বাসা-বাড়িতে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

রোববার (৫ এপ্রিল) জেলা শহরের ফলপট্টি ও বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতই বাজার মিলেছে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের দোকান নিয়ে বসেছেন সড়কের উপর। ঘরে বাজার না থাকায় অনেকেই এসেছেন বাজার করতে।

শুধু শহর নয় অনেক গ্রামেই এখনো সাপ্তাহিক হাট বসছে। সেখানের চায়ের দোকানে আড্ডা জমজমাট। কোন সামাজিক দূরত্বেরই ধার ধারছেন না তারা।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের বিলে দেখা যায়, বিভিন্ন জমিতে কাজ করছেন অন্তত শতাধিক দিনমজুর। তারা একে অন্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই চলছে তাদের জীবন। সকাল থেকেই জমিতে কাজ শুরু, দুপুরে সকালের রান্না করা খাবার খাওয়া আর কাজ শেষে বিকালে বাড়ি ফেরা। শুধু করপাড়ার এই বিলেই নয়, জেলার অনেক বিল এলাকার চিত্রই এ রকম। এদের মধ্যে আতঙ্ক নেই, তাই সচেতনতাও নেই।

করোনা প্রতিরোধে সরকার সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করায় তা শহরে কিছুটা মানা হলেও গ্রামে এর প্রভাব পড়েনি। সচেতনতার অভাব, আর্থিক অনটন, কোথাও কোথাও ধর্মীয় গোড়ামী ও অন্যান্য নানা কারণে গ্রামাঞ্চলে এসব মোটেই মানা হচ্ছে না। আড়ালে আবডালে বসে আড্ডা দেয়া, চায়ের দোকানে চা বিক্রিসহ আগের মতোই জীবন যাপন চলছে গ্রামাঞ্চলে।

করপাড়া গ্রামের বিলের জমিতে কাজ করতে আসা শ্রমজীবী সঞ্জিত সরকার, রেনুকা সরকার, মমতাজ বেগম এদের ভাষ্য, করোনা সম্পর্কে আমরা জেনেছি, আর দশ জনের কাছেও শুনেছি। চারিদিকের পরিবেশ সম্পর্কেও আমরা জানি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। পেটে মানেনা, জন বিক্রি না করলে বাড়িতে হাড়ি চলবেনা, না খেয়ে মরতে হবে। এ জন্যই আমরা কাজে বেরিয়েছি।

তাছাড়া বছরব্যাপী যেসব মহাজনের জমিতে জন বিক্রি করে খাই, তাদের ফসল নস্ট হচ্ছে, পরিষ্কার না করলে ফসল হবে না সেটাও আমাদের দেখতে হবে।

সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের মোসলেম সরদার বলেন, ‌‘করোনা আতঙ্কে থাকলেও আমাদের বিভিন্ন কাজে ঘর থেকে বাইরে বের হতে হচ্ছে। কাজের লোক হওয়ায় সারাদিন ঘরে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সকালে ও বিকালে বাইরে বের হতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে চা খেতে চায়ের দোকানে যাচ্ছি।'

কাশিয়ানী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। ঘরবন্দি মানুষকে সহায়তা করার পাশাপশি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। তবে সচেতনতার অভাবের কারণে মানুষ ঘরে থেকে বের হচ্ছে। বিভিন্ন চায়ের দোকোনে আড্ডা দিচ্ছে।'
 


টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, ‘জনসমাগম রোধে বিভিন্নস্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও হাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে সাধারন মানুষের কথা বিবেচনা করে কাঁচা বাজার মাত্র এক ঘন্টা খোলা থাকবে।'

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘মানুষকে ঘরে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। ঘরবন্দি মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সেনা বাহিনী, পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব না মানায় ইতিমধ্যে ১১জনকে জরিমানা করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, ইউপি মহল্লাদাররাও গ্রামাঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও পুরোপুরি আমরা মানুষকে ঘরে রাখতে পারছি, এমনটি নয়। তবে আজ (রোববার) থেকে সেনাবাহিনীও পুরোপুরি মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।'

তিনি যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করার অনুরোধ জানান। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মানতে ও মানুষকে ঘরে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার ২৩,৯১৫ পরিবারকে সরকারিভাবে ৩৮১ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এখনো জেলা প্রশাসনের হাতে ২৬৮ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। বেসরকারিভাবে দেওয়া ৭শ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।'

তিনি জানান, মানুষকে সচেতন করতে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে মাইকিং করার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম না মানায় ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে আড্ডা দেয়ার কারণে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে।

              

বাদল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়