ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এসময়ের খলিফা মোস্তাফিজুর রহমান

জয়পুরহাট সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এসময়ের খলিফা মোস্তাফিজুর রহমান

দেশে চলছে মহামারি করোনার ক্রান্তিকাল। এসময়ে অষোঘিত লকডাউনে স্থবির সকল এলাকা। মানুষের কাজ নাই, খাবার নাই।

না খেয়ে থাকা এক দম্পতির কথা শুনে ইসলাম শাসনামলের খলিফাদের মতো মধ্যরাতে খাবার নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছেন জয়পুরহাটের পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক।

শহরের তাঁতীপাড়া বস্তিতে এক দম্পতি অনাহারে আছেন—এমন সংবাদ জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রাইজিংবিডি’-তে দেখেন পৌর মেয়র।

এরপর রোববার (৫ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাত আড়াইটার দিকে নিজে তাঁতীপাড়া বস্তিতে গিয়ে জিয়ারুল হোসেন ও আমেনা বেগম দম্পতি ছাড়াও ওই বস্তিতে থাকা সকল পরিবারের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন তিনি।

তার দেওয়া খাদ্য সহায়তার মধ্যে ছিল ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেয়াজ, ১ কেজি আটা,  ১ কেজি ডাল, ১ লবণ, ১ কেজি তেল, এক হালি ডিম।

এর আগে রোববার সকালে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজি পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ‘৩ দিন চুলাত আগুন জ্বলেনি, শশা খ্যায়ে আচি’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এরপর তা সঙ্গে সঙ্গে পৌর মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষন করে।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, ‘সকালে রাইজিংবিডিতে প্রকাশিত আমার এলাকার এমন খবর আমাকে বেশ নাড়া দেয়। আমি মর্মাহত হই। সারাদিন বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আমি তাদের আর খোঁজ নিতে পারিনি। পরে রাতে হঠাৎ এটা মনে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে রাইজিংবিডির ওই প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ওই অসহায় নারীকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসি। তাছাড়াও ওই বস্তিতে থাকা আরো ৪৫টি দরিদ্র পরিবারের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দেই। আমি আমৃত্যু এই পিতৃতুল্য, মাতৃতুল্য, ভাইতুল্য, বোনতুল্য মানুষগুলোর ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না। তারা আছেন বলেই আমি আজকের মেয়র। তাছাড়া, পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকা এই মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে তাদের পাশে এই মুহূর্তে দাঁড়ানোকে একজন বিবেকবান মানুষের কাজ বলে মনে করি। করোনা পরিস্থিতিতে আমার এই এলাকায় কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না। ইনশাআল্লাহ খাবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিবো। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশে কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট করবে না, আমরা তা করতে দিবো না। ’

এসময় পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জানান, রাইজিংবিডি সব সময় অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষকে নিয়ে কথা বলে। তাদের জন্য আমরা এইসব অসহায় মানুষ সম্পর্কে জানতে পারি। আমাদের কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়। আমরা চাই, রাইজিংবিডি আরো বেশি বেশি সমাজের প্রান্তিক, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কথা বলুক।

মধ্যরাতে খাবার পেয়ে সেই আয়না বেগম আবেগে কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা না খেয়ে আছি শুনে মেয়র সাহেব মধ্যরাতে আমার বাসায় এসে নিজেই খাদ্য দিয়ে গেলেন। দেশে এখনো তার মতো ভাল মানুষ আছেন। যারা এই অভাবের দিনে আমাদের সাহায্য করলেন তাদের আল্লাহ ভাল করবেন। তাদের জন্য আমার এই বাচ্চা মেয়েটা পেট ভরে দুবেলা ভাত খেতে পারবে।’

এ বিষয়ে তাঁতী পাড়া বস্তি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি কনিকা খাতুন বলেন, ‘মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দিনমজুর বেকার মানুষগুলোর অভাবের কথা চিন্তা করে আমাদের মেয়র সাহেব যে এই রাতে খাবার নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন—এটা খুবই প্রসংসনীয়। তার এই সহায়তায় এই বস্তির সবাই আগামী কয়েকদিন ভালভাবে থাকতে পারবেন। আমরা সবাই এমন মেয়র চাই। এমন নগর পিতাই চাই। ’

এদিকে, প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পেয়ে ওই বস্তির সানোয়ারা বেগম, সন্ধ্যা রানী, প্রতিমা রানী, পান্না আক্তার, পপি বেগমসহ হতদ্ররিদ্র মানুষগুলোর চোখে-মুখে খুশির আভাস লক্ষ্য করা গেছে। করোনা পরিস্থিতির দুর্দিনে এমন সাহায্য পেয়ে পরিজনদের নিয়ে চারটা ডালভাত খেতে পারবেন বলে মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। এবং ভবিষতে যে কোনো দুর্যোগে ‍মেয়র তাদের মতো ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষগুলোর পাশে থাকবেন- এই আশা ব্যক্ত করেন তারা।

 

শামীম/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়