ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিজ উদ্যোগে হুড়কা ইউনিয়ন অঘোষিত লকডাউন!

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিজ উদ্যোগে হুড়কা ইউনিয়ন অঘোষিত লকডাউন!

করোনা প্রতিরোধে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নে আসা- যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য ভ্যাকোটমারি-বাবুর বাড়ি, বেলাই ব্রিজের দুই পাশ, গোনাই ব্রিজ বাজার মন্দিরের পাশে, ঝলমলিয়া রোডসহ ১০টি পয়েন্টে বাশঁ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে এলাকাবাসী।

এসব ব্যারিকেডের পাশে হাত ধোয়ার জন্য পানি ও সাবান রাখা হয়েছে। ইউনিয়নের সকল বাজার, হাট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করেছে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। বর্তমানে বাড়ি বাড়ি জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে।

ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিজ ইউনিয়নকে করোনা মুক্ত রাখতে এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন গোলদার।

ইউনিয়নে আসা ও যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার ফলে খেটে খাওয়া মানুষদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে বাড়িতে। করোনা প্রতিরোধে এমন উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী।

ইউনিয়নের বিচিত্র বীর্জ পাড় গ্রামের কুন্তল মণ্ডল, সুচিত্র হালদার, লতিফ মল্লিকসহ কয়েকজন জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার বার বার ঘরে থাকতে বলছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হতে নিষেধ করছে। কিন্তু কিছু মানুষ এসব কথা মানছে না। অন্যান্য এলাকা থেকেও এসে এই ইউনিয়নে এসে আড্ডা দিতো। চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের লোকেরা নিষেধ করা স্বত্ত্বেও শুনতো না। তাই, চেয়ারম্যান এলাকার প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে সবাই খুব খুশি।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা রাখার অনুরোধ জানান তারা।

জয়নগর পিপুল বুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত ঢালি বলেন, ‘চেয়ারম্যান তপন গোলদার ও ইউনিয়নের যুবকরা মিলে করোনা প্রতিরোধে যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা খুবই প্রশংসনীয়। তারা এলাকার মানুষকে ঘরে থাকতে উৎসাহ দিচ্ছেন। কোন মানুষের ঘরে চাল না থাকলে, তার বাড়িতে চাল দিয়ে আসছেন। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির রাখা হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’

ইউপি সদস্য পূর্নেন্দু ঘোষ, অনিমেশ, পরিমল মণ্ডল, আব্দুল্লাহ মোড়ল জানান, প্রধান সড়কে এখন আর মানুষ দাঁড়াতে পারছে না।  মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকতেও পারছে না। তাই চেয়ারম্যানের নির্দেশে এলাকার প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এলাকার মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া ও প্রবেশের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মুঠোফোনে যোগাযোগ করবেন। গ্রামপুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবকরা এসে খুলে দিয়ে যাবেন।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারাবিশ্ব যখন ভয়ে কাঁপছে। তখন কিছু মানুষ কোনভাবেই সরকারি নির্দেশনা মানছেন না। তাই ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষকে করোনা মুক্ত রাখতে ইউনিয়নে প্রবেশ ও বের হওয়ায় বিষয়ে এক ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ

বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া, খেটে খাওয়া মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের অঘোষিত লকডাউনের বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অবহিত করেছেন। এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। এমন পরিস্থিতিতে এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত করাটা ভাল। তবে এ বিষয়ে যদি কারও কোন অভিযোগ থাকে, সে বিষয়টি সমাধান করা হবে।


টুটুল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়