ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

স্বামী বেকার, অভাবে সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা স্ত্রীর

সাভার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ১৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বামী বেকার, অভাবে সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা স্ত্রীর

গার্মেন্টসে চাকরি করতেন সোহেল। করোনা সংক্রমণের কারণে গার্মেন্টস বন্ধ। তাই বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছেন। সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান তার।

স্থানীয় বাজারে সোহেলের বাবা কালামের একটি চায়ের দোকান আছে। স্ত্রীকে নিয়ে কালাম সেই চা দোকান চালান। চা দোকানের উপার্জনে কোনোমতে সংসার চলে দুজনের। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকায় দোকানপাট সব বন্ধ। কালামের চা দোকাও। উপার্জনও নেই। তিনিও বেকার।

বাপ-বেটা দুজনেই এভাবে বেকার হয়ে পড়ায় সংসারের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সঞ্চিত অর্থও নেই যে তাই দিয়ে চলবেন। সরকারি বেসরকারি কোনো সহায়তাই পাননি তারা। সংসারে তাই জেঁকে বসেছে অভাব অনটন। মন মেজাজ কারও ভালো নেই। কথায় কথায় তাই মান-অভিমান, ঝগড়া-ঝাটি চলছে।

মৌখিক ঝগড়া সীমা অতিক্রম করে এক পর্যায়ে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে মোড় নিয়েছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন সোহেলের স্ত্রী লাইজু আক্তার।

মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাভারের ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কাওয়ালিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী জানান, কালাম ও তার স্ত্রী স্থানীয় বাজারে চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে কালামের পুত্রবধূ লাইজু সন্তানসহ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা গিয়ে অঘটনের হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছেন।

লাইজু আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সোহেল গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। বর্তমানে বেকার। এ কারণে আমার শ্বশুর আমাদেরকে তার বাড়ি থেকে বের করে দিতে চান। এ নিয়ে আমাদের মধ‌্যে ঝগড়া হয়। আমার দুটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের বয়স ছয় বছর, ছোটটির ১০ মাস। এদের নিয়ে এক প্রকার না খেয়ে দিন পার করছি। এখন যদি বাড়ি থেকে বের করে দেন, তাহলে সন্তান দুটি নিয়ে আমি কোথায় যাব?’

লাইজু আক্তারের স্বামী সোহেল বলেন, ‘গার্মেন্টসের চাকরি হারানোর পর আমি বেকার হয়ে পড়েছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে বাইরেও কাজ করতে পারছি না। এখন বাড়ি থেকে বের করে দিলে কোথায় যাব? আব্বার সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লাইজু আত্মহত্যার চেষ্টা করে।’

সোহেলের বাবা কালাম বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী বাজারে চা বিক্রি করি। তাতে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনমতে বেঁচে আছি। একেতো অভাবের সংসার, তার উপরে আবার করোনাভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ। অভাবের সংসারে নিজেরাই চলতে পারছি না, ওদের খরচ কী করে বহন করব? সোহেল যদি কাজ করে সংসার চালাতে পারে চালাবে, না পারলে আমার বাড়ি থেকে চলে যাবে।’

গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আজ গোটা বিশ্ব স্তব্ধ। এ বস্থায় হতদরিদ্রদের মাঝে আমরা ত্রাণ বিতরণ করছি। যদি কেউ ত্রাণ না পেয়ে থাকে, তারা আমাদের জানালে তার বাড়ি গিয়ে আমরা ত্রাণ দিয়ে আসি। কিন্তু এসময় কেউ যদি পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, সে দায়ভার আমাদের নয়।’

কাওয়ালিপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাসেল মোল্লা বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সাব্বির/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়