ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিরাজদিখানের মৃৎশিল্পীরা ভালো নেই

শেখ মো. রতন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিরাজদিখানের মৃৎশিল্পীরা ভালো নেই

করোনার কারণে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মৃৎশিল্পীরা ভালো নেই।

চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, বৈশাখী মেলা হয়নি- তাই তাদের তৈরি মৃৎশিল্প'র বেচাকেনা হয়নি। যে বেচাকেনার ওপর ভর করে সারা বছরের অন্নের সংস্থান হয়, সে মেলা না হওয়ায় তারা মোটেও ভালো নেই।

বৈশাখে এখানে মাসব্যাপি বাঙালির উৎসব থাকে। কিন্ত করোনা সব তছনছ করে দিয়েছে। এবার সেই উৎসব হয়নি। মৃৎশিল্পীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মৃৎশিল্পীরা বেঁচে থাকেন বাংলা নববর্ষকে ঘিরে। পহেলা বৈশাখের দিন থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ মাস জুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানের মত মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলায়ও সমারোহের সঙ্গে বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার জেরে এবার সবই বন্ধ। দীর্ঘদিন ধরে সিরাজদিখানে লকডাউন অবস্থা চলছে।বন্ধ বাড়ানো হয়েছে। মহামারি থেকে বাঁচতে বেড়েই চলেছে সরকারি বেসরকারি ছুটির মেয়াদ।আর তাই নববর্ষের মাসে মাথায় হাত পড়েছে সিরাজদিখান উপজেলার মৃৎশিল্পীদের।

লকডাউনের মধ্যেই অতিক্রম হয়ে গেছে বৈশাখী উৎসব। উপজেলার কোথাও মেলা হয়নি। আগে থেকে বায়না দিয়ে রাখা ব্যবসায়ীরাও শেষ মুহূর্তে অর্ডার বাতিল করেছেন। প্রতিবারের থেকে এবারের চেহারাটা যেন পুরো উল্টো। নববর্ষে এবার মোটেই বিক্রি নেই মাটির তৈরি জিনিসপত্রের।
 


যেখানে পহেলা বৈশাখ ঘিরে বাঙালির উদ্দীপনার শেষ থাকে না। যে পহেলা বৈশাখকে ঘিরেই এখনো টিকে রয়েছে পালপাড়াগুলো। সেই পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীদের পরিবারে এবার পহেলা বৈশাখ এসেছে বিষাদের কালো ছায়া।

প্রতিবছর এই দিনটাতে মাটির পুতুল, ঘোড়া, গনেশের মূর্তি, পান্তা ইলিশের মাটির থালার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সমস্ত ব্যবসায়ী এই নববর্ষের দিনটিতে ব্যবসার হাল ফেরাতে সিদ্ধিদাতার আরাধনায় মেতে ওঠে। এবার সেই মৃৎশিল্পের ব্যবসাটার চিত্রটাই হতাশাজনক। হাজার হাজার মাটির তৈরি তৈজসপত্র রয়েছে মৃৎশিল্পীদের বাড়িতে বাড়িতে। কিন্তু করোনা যেভাবে গ্রাস করেছে তাতে বিক্রি তো দূরের, নিজেদের সুস্থ রাখতেই মরিয়া হয়ে পড়েছে সকলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের বড় আখড়া পালপাড়া গ্রাম, চোরমর্দ্দন, বাসাইল, রাঙ্গামালিয়া, শেখরনগর, আবিরপাড়া ও দানিয়াপাড়া পালপাড়া গ্রামে পাঁচশতাধিক পরিবার রয়েছে- যারা এই মৃৎশিল্পকে ধরে রেখেছেন।

দানিয়াপাড়া বড় আখড়া ও বাসাইলের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দুই মাস আগে থেকেই পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি চলছিল পালপাড়ায়। তৈজসপত্র, খেলনা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন তারা। তবে যে সময়টায় এই ব্যস্ততায় দিন কাটে তাদের, ঠিক তখনই সবকিছু পাল্টে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে যায় জীবনযাত্রা। এই অবস্থায় জীবন নিয়েই মানুষ আতঙ্কে, বাসন কোসন কিনবে কে ? ফলে আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়েছেন তারা।

নিধির পাল বলেন, ‘আমাদের পথে বসার অবস্থা এখন।'

দিপক পাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে না তাকালে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো না।'

নূপুর পাল বলেন, ‘মাটি কিনে এনে তৈজসপত্র বানাতে হয়। মাটি কিনে রেখেছিলেন কিছু কিছু তৈজসপত্র ও খেলনা বানানো হলেও তা বিক্রি আর হবে না এবার। অনেকের তৈজসপত্র পোড়ানোর চুলাও জ্বলেনি। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। ধার দেনা করে এই এগুলো তৈরি করেছিলাম। এখন কি হইবো আমাগো?'

 

মুন্সীগঞ্জ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়