ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দুই হাত দিয়েই লড়ে চলেছেন দুই পা হারানো স্বপ্না

বিজয় ধর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুই হাত দিয়েই লড়ে চলেছেন দুই পা হারানো স্বপ্না

কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান বনগ্রাম মূল রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করছিলেন হুইল চেয়ারে বসা এক নারী। নাম স্বপ্না চাকমা।

রোববার (৩ মে) গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই শাকসবজি নিয়ে বিক্রি করতে বসেছিলেন। কথা হয় তার সাথে। আলাপ-সালাপে জানতে পারি তার জীবনের অনেক বিষয়। কে জানতো, তার এই জীবনের আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক কষ্টের গল্প।

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলাধীন নোয়াপাড়া মাষ্টার দা সূর্য সেন পল্লীর স্বপ্না দাশই এখন স্বপ্না চাকমা। ১৯৯৮ সালের মে মাসে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতালে কুষ্ঠ রোগ নিয়ে ভর্তি হন। চিকিৎসার মধ্যেই ভালোবেসে ফেলেন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক কুষ্ঠরোগী জ্যোতিষ চাকমাকে। ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন তারা। রাউজানের স্বপ্না দাশ হয়ে যান স্বপ্না চাকমা। ঘর সংসার করতে থাকেন সুন্দরভাবে।

এরই মধ্যে কুষ্ঠ রোগের কারণে দুই পায়ে ক্ষত দেখা দেয়ায় ডাক্তারদের পরামর্শে ২০০৪ সালে তার দুই পা কেটে ফেলতে হয়। তারপরও স্বামীর নিবিড় সেবা ও ভালবাসায় দু'টি সন্তান নিয়ে এগিয়ে চলে জীবন।

চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান ও কুষ্ঠ  হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং তাদেরকে হাসপাতালের কোয়াটারে বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এমন কি বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধেরও ব্যবস্থা করে দেন।

ছেলে আকাশ চাকমা ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে এখন বাসের হেলপারের কাজ করে আর মেয়ে পূর্নিমা চাকমা চন্দ্রঘোনা বি এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ছে।

প্রতিদিন হুইল চেয়ারে স্বামীসহ কাপ্তাই সড়কের বনগ্রাম এলাকায় শাকসবজি বিক্রি করে একরকম শান্তিতেই জীবন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু এই সুখটুকু হারিয়ে গেল ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল। পরিবারকে অকুল সাগরে ভাসিয়ে প্রয়াত হলেন তার স্বামী জ্যোতিষ চাকমা। স্বামীকে হারিয়ে  চোখে মুখে অন্ধকার দেখেন স্বপ্না। এখন একাই সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছেন দুই পা হারানো স্বপ্না।

স্বপ্না চাকমা বলেন, ‘প্রতিদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান বনগ্রাম মুল রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করতে বসি। কোনদিন ২০০, কোনদিন ৩০০, আবার কোনদিন ৫০০ টাকা বিক্রি হয়।এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে ছেলেটি হয়ে পড়েছে কর্মহীন।  বাজারে আগের মতো ক্রেতা নেই। এইভাবে খুব অর্থকষ্টে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।'

বনগ্রাম এলাকার ওষুধ বিক্রেতা রতন কুমার নাথ জানান, প্রতিদিন এই মহিলা হুইল চেয়ারে করে তার দোকানের সামনে বসে তরিতরকারি বিক্রি করেন। কোনদিন কম, কোনদিন বেশি বিক্রি হয় তার। আশেপাশে আরো শাকসবজি বিক্রেতা হওয়ার ইদানিং তার বিক্রি কমে গেছে বলেও জানান।

স্বপ্না চাকমা থেকে প্রতিদিন সবজি কিনেন বনগ্রাম হাফেজ পাড়ার বাসিন্দা আন্না দত্ত। তিনি জানান, স্বপ্না কখনো বেশি দাম নেন না, খুব সৎ ভাবে চলতে চেষ্টা করেন তিনি। শত দুঃখের মাঝেও হাসিমুখে থাকতে চেষ্টা করেন।

দুই পা হারানো স্বপ্না হয়তো ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতে পারতো কিন্তু তিনি মনে করেন,যতক্ষণ তার হাত দুটি আছে, ততদিন এটাকে কাজে লাগিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করবেন।

 

রাঙামাটি/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়