‘মনে হয় বিষ খায়া মইরে যাই’
‘পায়ে সেপটিক ঘা হওয়ার পরেরথিকে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়া গ্যাছে। এর মধ্যি একমাস বয়সী মিয়েডাক থুয়ে মরে যায় বউ। খায়া, না খায়া বহুত কষ্টে দিন পার হচ্ছে। করোলা আইসে আমার কষ্ট বাড়ায়া দিছে। মনে হয় বিষ খায়া মইরে যাই। কিন্তু মেয়েগুলার মুখের দিকে তাকায়া পারি না। সবচেয়ে কষ্ট হয়, যহন ছোট মিয়েডার জন্যি দুধ কিনবের পারি না। পাতলা সুজি খাওয়াইয়া রাখা লাগে। আমার জীবনডা ব্যার্থ হয়া গ্যাছে।’
এভাবেই নিজের ও মেয়ের দুঃখের কথা জানাতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রাজারদিয়াড় গ্রামের অসুস্থ বিল্লাল হোসেন।
অন্যের জায়গার ওপর কোনো মতে একটি টিনের ছাপড়া ঘরে তুলে বসবাস এই দরিদ্র পরিবারটির। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনোমতে সংসার চললেও করোনা পরিস্থিতিতে অভাব-অনটনের সংসারকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ঘরের কাঠের ভাঙ্গা চোকিতে শুয়ে বড় মেয়ে বিলকিস ও মেজ মেয়ে অঞ্জনা স্বপ্ন দেখেন হয়তো সুস্থ হবেন বাবা বিল্লাল হোসেন। সংসারে ফিরবে সচ্ছলতা। তবে ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে তাদের স্বপ্ন।
বিল্লাল হোসেনের ছোট মেয়ে নয় মাস বয়সী ফাতেমা খাতুন। জন্মের মাসখানেকের মাথায় মাকে হারায় শিশুটি। তবে বড় দুই বোন বিলকিস ও অঞ্জনা মায়ের আদরে বড় করে তুলছে তাকে। কিন্তু শিশুটির যখন দুধসহ নানা পুষ্টিকর খাবার দরকার তখন তার ভাগ্যে জোটে পানি মিশ্রিত পাতলা সুজি!
নির্মাণ শ্রমিক বাবা বিল্লাল হোসেন পায়ে সেপটিক ঘায়ে আক্রান্ত হওয়ায় এখন বিছানা শয্যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এখন কর্মহীন। অর্ধহারে-অনাহারে সংসার চলে। তাই ফাতেমার জন্য দুধ কেনা অলীক স্বপ্নের মতো পরিবারটির কাছে!
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রতিবেশীরা খাবার দিলে তবেই খাওয়া হয় তাদের, নয়তো অভুক্তই থাকতে হয়। সরকারি ত্রাণের চাল পেয়েছেন, তবে তা খুবই কম। দুদিনেই শেষ হয়ে গেছে।
অভাবের কষাঘাতে ছোট মেয়ে ফাতেমার জন্য দুধ কিনতে পারেন না। টাকার অভাবে সেপটিক ঘায়ের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না বিল্লাল হোসেন। এখন পঙ্গু হওয়ার পথে।
এদিকে আশ্রয়দাতা জায়গা মালিক সাইফুল ইসলামও সম্প্রতি তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছেন। তিন মেয়েকে নিয়ে এখন কোথায় যাবেন বিল্লাল? কী খাবেন?
মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আজিজুল হক বলেন, ‘পরিবারটি খুব কষ্টে থাকে। আমি দুই বছর মেয়াদী ভিজিডির কার্ড করে দিয়েছি। কয়েকদিন আগেও পরিবারটিকে ৩০ কেজি চাল চাল দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও সহযোগিতা করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। এখন জেনেছি। খোঁজ নিয়ে ওই পরিবারকে সব রকমের সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।’
অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে চাইলে, সহযোগিতা করতে চাইলে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন বিল্লাল। ০১৭১৬-১২০২৫৩ (নগদ ও রকেট)।
পাবনা/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন