প্রভাবশালীদের দখলে মধুমতি বাঁওড়
বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মধুমতি বাওড়ে কাঠা (এক ধরনের জাল) ফেলে অবৈধভাবে মাছ ধরছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার দরিদ্র অসহায় জেলেরা।
ইতোমধ্যে কাশিয়ানী উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় মধুমতি বাওড়ে অবৈধভাবে কাঠা দিয়ে মাছ ধরায় ইব্রাহিম মোল্যা নামে এক ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম। সেসময় মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু জাল ও সরঞ্জাম আটক করা হয়।
জানাগেছে, সত্তর দশকের শেষ দিকে মধুমতি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উপজেলার ফুকরা, তারাইল, পরাণপুর, ঘোনাপাড়া, চাপ্তা, রাতইল, ধানকোড়া, সুচাইল ও চরভাটপাড়া এলাকা নিয়ে বিশাল জলাশয় (বাওড়) সৃষ্টি হয়। যা এখন ‘মধুমতি বাঁওড়’ নামে পরিচিত।
এ অঞ্চলের দরিদ্র জেলেদের মৎস্য শিকারের জন্য বাওড়টি সরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু, বর্তমানে এলাকার এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁশ পুঁতে ও কাঠা ফেলে বাঁওড়টি দখলে রেখেছে। বাঁওড়ের তীরবর্তী অধিকাংশ মানুষের পেশা মাছ ধরা ও কৃষি কাজ। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে বাঁওড়টি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তারাইল, পরানপুর, ঘোনাপাড়া, চাপ্তা, রাতইল ও ধানকোড়া এলাকায় মধুমতি বাঁওড়ে শতাধিক স্থানে বাঁশ পুঁতে ও কাঠা ফেলে জাল দিয়ে ঘিরে মৎস্য শিকার করা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদারকির করলেও প্রভাবশালীদের সাথে পেরে না উঠছে না। এ কারণে দিন দিন প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে বাঁওড়টি।
বাঁওড় এলাকার বাসিন্দা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মৎস্য আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বাঁওড়ে মৎস্য শিকার করছেন। ফলে দিন দিন এ অঞ্চল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার তারাইল জেলে পাড়ার একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, ‘মধুমতি বাঁওড়ে এলাকার কিছু প্রভাবশালী কাঠা ফেলে দখল করে রেখে মাছ ধরছেন। দরিদ্র জেলেরা বাওড়ে মাছ ধরতে গেলে ওই প্রভাবশালীরা তাদেরকে বাঁওড় থেকে উঠিয়ে দেন। মারধর ও মামলার ভয় দেখান। ভয়ে দরিদ্র জেলেরা বাঁওড়ে মাছ শিকার করতে যেতে পারে না।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাঁওড়ের তীরবর্তী এলাকার কিছু প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তি বাঁওড়ে অবৈধভাবে বাঁশ ও কাঠা দিয়ে দখল করে রেখেছেন। অথচ তারা জেলে নন। দীর্ঘ দিন ধরে বাঁওড়টি দখলে রেখে অবৈধভাবে জাল দিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ শিকার করছেন। অথচ এলাকার দরিদ্র জেলেরা বাঁওড়ে মাছ ধরতে পারছেন না। এতে করে এক দিকে যেমন দরিদ্র জেলেরা মৎস্য শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে ধবংস হচ্ছে দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম।’
কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘মধুমতি বাঁওড়ে কেউ বাঁশ পুঁতে, কাঠা ফেলে দখলে রেখে মাছ শিকার করতে পারবে না। বাঁওড় সকলের জন্য উন্মুক্ত। কেউ আইন অমান্য করে মৎস্য শিকার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রচলিত মৎস্য আইনে নিয়মিত বাঁওড়ে মৎস্য বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
গোপালগঞ্জ/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন