ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ওএমএস-এর তালিকায় আ.লীগ নেতার পরিবারের ১২ সদস্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১৩ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ওএমএস-এর তালিকায় আ.লীগ নেতার পরিবারের ১২ সদস্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল (ওএমএস) ক্রয়ের উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহআলমের স্ত্রী, কন্যা, ভাই, বোন, শ্যালকসহ পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের ১২ জনের নাম।

বুধবার (১৩ মে) জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুক ও ভবঘুরেসহ হতদরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা কোনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির অর্ন্তভূক্ত নয়, তাদের জন্য বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করা হয়েছে।

এই সুবিধায় একজন ওএমএস কার্ডধারী প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পাবেন। সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এলাকায় ৯,৬০০ জনকে দেওয়া হচ্ছে ওএমএস কার্ড। কার্ডের জন্য প্রথম দফায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এই তালিকা করা হয়। প্রথম দফার তালিকা অনুযায়ী ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর সভার ১০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির পরিচালক ও জেলা রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম পরিবার ও নিকটাত্মীয় ১২ জনের নাম তুলেছেন ওএমএস কার্ডের তালিকায়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের ওএমএস তালিকা থেকে জানা গেছে, পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের ওএমএস কার্ডের তালিকায় ১২ নম্বরে রয়েছে শাহআলমের কন্যা আফরোজা ও ১৬ নম্বরে তার স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলমের নাম। শাহআলমের তিন ভাই বোন সেলিম মিয়া, আলমগীর ও শামসুন্নাহারের নাম রয়েছে ৮, ৯ ও ২৭ নম্বরে।

অপর ভাই খোরশেদ মিয়ার প্রবাসী ছেলে নাছিরের নাম রয়েছে ৭ নম্বরে, ৩ নম্বরে রয়েছে শ্যালক তাজুল ইসলাম, ৫ নম্বরে তাজুল ইসলামের স্ত্রী আসমা ইসলাম, আরেক শ্যালক প্রবাসী শফিকুল ইসলামের নামও রয়েছে তালিকার ১৩ নম্বরে এবং ১০ নম্বরে রয়েছে অপর শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলামের নাম। শাহআলমের বোন শামসুন্নাহারের তিন দেবর মতিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও লুৎফুর রহমানের নাম রয়েছে তালিকার ৭২, ৭৩ ও ৭৪ নম্বরে।

ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান শাহ আলম গরীবের ওএমএস কার্ডে স্ত্রী-সন্তানসহ নিকটাত্মীয় ১২জনের নাম তোলায় সমালোচনার ঝড় বইছে জেলার সর্বত্র। এ ঘটনায় সরকার যে সুবিধা দিচ্ছেন সেটি থেকে গরিব-অসহায়রা বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলম নিজে পৌর সভার ১০ নং ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাদেরকে তালিকা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা যদি প্রকৃতদের এড়িয়ে তাদের পছন্দের লোকদের নাম দেন সেটি তো ঠিক না। এতে করে যে উদ্দেশ্যে সরকার যাদের জন্য এই সুবিধা দিচ্ছেন সেটি তারা পাবে না।’

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলম বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে মহল্লার হতদরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত যারা আছেন তাদের তালিকা করতে। এই তালিকা কাউন্সিলরের কাছে পাঠানো হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছভাবে চলতে গেলে গরিব থাকতে হয়। আমিও গরিব। পৈতৃক টাকায় বিল্ডিং করেছি। এখন আমি ২২ লাখ টাকা ঋণে আছি। আমার মেয়ের জামাইও বেকার। এমন চিন্তা করেই নাম দিয়েছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে দেখুক।’

পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকবুল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সৎ পথে রয়েছি। জানামতে কোনো ভুল করিনি। যাচাই-বাছাই করেই নাম দেওয়া হয়েছে।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ‘ওএমএস কার্ডের তালিকায় সামর্থ্যবানদের নাম ওঠার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তালিকা যাচাই-বাছাই করে সামর্থ্যবান যাদের পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বাদ দেয়ার জন্য আমরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। ইতোমধ্যে ওএমএস কমিটির সভায় ৯১ জন সামর্থ্যবান ভোক্তাকে চিহ্নিত করে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, ‘তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতার পরিবার ও স্বজনদের নাম ওঠার বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ- দৌলা-খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে পৌরসভার মাধ্যমে ওএমএস এর ছয় হাজার কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার মোট ৯১ জন সামর্থবান ব্যক্তির নাম এসেছে। শাহআলম কাউতলী এলাকার ওএমএস ডিলার। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা তাকে শোকজ করেছি। দুই দিনের মধ্যে তাকে এ ব্যাপারে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

 

মাইনুদ্দীন রুবেল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়