ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মোক আর কেটা ভাত দিবে, কেটা খোঁজ নিবে?’

সিদ্দিক আলম দয়াল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২১ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘মোক আর কেটা ভাত দিবে, কেটা খোঁজ নিবে?’

‘মা আমার আর চাকরি নাই। ঢাকায় থাকা খাওয়ার মতো অবস্থা নাই। তাই ধার দেনা করে বাড়িতে আসছি।’ টেলিফোনে এই শেষ কথাটি বলেছিলেন মোতালিব আলী তার মা রোকেয়া বেগমের কাছে। বাড়িতে ঠিকই ফিরলেন মোহসিন, তবে লাশ হয়ে।

ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন মোতালিব আলী। তার বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার ভগবানপর গ্রামে। বাবা খলিলুর রহমান অনেক আগেই মারা গেছেন। সংসারে একমাত্র উপর্জনক্ষম ছিলেন মোতালিব।

দুবছর আগে বিয়ে করেন মোতালিব। দেড় বছর বয়সী এক ফুটফুটে মেয়ের বাবা তিনি। এবার ঢাকায় যাওয়ার সময় মা-স্ত্রী-কন‌্যাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তা আর হলো না।

করোনার সাধারণ ছুটির সময় মোতালিব বাড়ি গিয়েছিলেন। তবে কারখানার খোলার কথা শুনে জীবন বাজি রেখে ঢাকায় ফেরেন। কোনো মতে চাকরিটা বাঁচান। কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র চার দিন পর ছাঁটাই তালিকায় নাম ওঠে তার। চাকরি হারান তিনি।

এ নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের পিটুনীর শিকার হন। এরপর থেকে হতাশায় ভুগছিলেন। আশা ছিলো ঈদের আগে বেতন পেলে মা-স্ত্রী-কন‌্যার জন‌্য নতুন কাপড় কিনে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তা আর হলো না। জীবন থেকেই ছুটি নিয়ে নিলেন তিনি।

আহাজারি করতে থাকা মোতালিবের মা ছেলের শোকে পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন। কান্নারত অবস্থায় তিনি জানান, চাকরি হাড়িয়ে হতাশ মোতালিব কয়েকদিন অন্যত্র চাকরির চেষ্টা করেন। চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফেরার চিন্তা করেন। মাকে ফোন করে সব সমস্যার কথা জানান। মা ও স্ত্রী হালিমা তাকে বাড়ি আসতে বলেন। আজকেই বাড়ি ফেরার কথা তার।

মাত্র দুশো টাকা ছিলো মোতালিবের পকেটে। তাই নিয়ে বুধবার (২০ মে) রাতে চন্দ্রা মোড়ে দাঁড়ান গাড়ির অপেক্ষায়। রংপুরগামী একটি রড বোঝাই ট্রাকও পেয়ে যান। দুশো টাকায় পলাশবাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে রাজি হন ট্রাক চালক।

ঝড়-বৃষ্টির মধ‌্যে সারারাত ধরে রডের গাড়িতে ত্রিপল মাথায় দিয়ে বসেছিলেন মোতালিবসহ ১৩ জন। কাক ভেজা হয়ে পলাশবাড়িতে পৌঁছান তারা। কিছুক্ষণের মধ‌্যেই গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার কথা ছিল মোতালিবের। তারপর কাঙ্খিত আপনজনের কাছে। দরিদ্র হলেও মায়ের নিরাপদ আঁচল তলে। কিন্তু সব আশা ভেস্তে গেলো।

গাড়িটি পলাশবাড়িতে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে যায়। রডের নিচে চাপা পড়ে মোতালিব আলীসহ ১৩ জন যাত্রী। পুলিশ সবার লাশ উদ্ধার করেছে। তবে মোতালিব আলী ছাড়া এখনো কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মোতালিবের মা ও স্ত্রী গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। লাশ দেখে মোতালিবের মা বুক চাপড়ে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘হামাক আর কেটা ভাত দিবে? কেটা আর খোঁজ নিবে। কেটা ফোন করি বলবে মা তোমরা চিন্তা করেন না আমি ঈদের আগে ট্যাকা পাঠামো, তোমরা কেনাকাটা করেন।’

সেসময় ছেলের লাশের পাশে বসে মায়ের বুক ফাটা আহাজারিতে পলাশবাড়ি হাইওয়ে থানার সামনের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

** রডবোঝাই ট্রাকচাপায় নিহত ১৩


গাইবান্ধা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়