ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মোক এ্যানা কেউ ঠেলাগাড়ি দেন বাহে’

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ২৭ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘মোক এ্যানা কেউ ঠেলাগাড়ি দেন বাহে’

সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কে না বাঁচতে চায়? নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই ভালোভাবে বাঁচতে চায়। যদিও একেকজনের কাছে ভালোভাবে বাঁচতে চাওয়ার অর্থ একেক রকম। কারও অট্টালিকা-কোটি টাকা লাগে ভালোভাবে বাঁচতে। কেউ দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে চায়। আবারও কারও চাহিদা সামান‌্য একটা হুইল চেয়ার।

দিনাজপুরের হিলির নওপাড়া গ্রামের আহাদ আলী (৬৫)। শারীরিক প্রতিবন্ধী। সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেন না। দুহাতে ভর করে ছেঁচড়ে চলেন। বয়সের ভার আর রোগে নুয়ে পড়া শরীর। কানে কম শোনেন। চোখেও কম দেখেন।

তিন মেয়ে, এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। স্ত্রী মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। ছেলেটা ছোট। একজনের মুরগির খামারে কাজ করে। টানাটানির সংসারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি।

জীবন সায়াহ্নে এসেও অসুস্থ শরীর নিয়ে সকাল থেকে শুরু হয় আহাদ আলীর জীবন যুদ্ধ। দুহাতে ভর করে পথ চলেন তিনি। হিলির অলিগলিতে তার হাতের ছাপ পড়ে রয়। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফেরেন তিনি। সব থেমে থাকে, পেট তো আর থামে না। তাই পরিবারের সবার কথা ভেবেই পথে বের হতে হয় আহাদ আলীকে।

দিনশেষে অন‌্যের দেওয়া সহায়তা সম্বল করে বাড়ি ফেরেন তিনি। অসহায় এই মানুষটি তাতেই সন্তুষ্ট। মেনে নিয়েছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। জীবনের অনেক চাওয়া পূরণ হয়নি তার। আরও অনেক আশা হয়তো পূরণ হবে না। কেবল একটি আশা বুকে লালন করে ফেরেন এই অসহায় মানুষটি। যেটি পূরণ হওয়ার স্বপ্ন লালন করেন বুকে।

হিলির সিপির রাস্তায় তাকে দুহাতে ভর করে পথ চলতে দেখা যায়। রাইজিংবিডির হিলি সংবাদদাতা তাকে এভাবে চলতে দেখে কাছে যান। কুশলাদি জানতে চান। তিনি শুনতে পাননি প্রথমে। পরে একটু জোরে কথা বললে তিনি বুঝতে পারেন তাকে উদ্দেশ‌্য করে কিছু বলা হচ্ছে।

তিনি নিজেই তখন প্রশ্ন করেন, ‘কে তোরা, কি কছেন মোক?’

এরপর কথপোকথনে বেরিয়ে আসে তার দুঃখ-কষ্টের কথা। তিনি বলেন, ‘হারা গরিব মানুষ, হামার ছাউ (দিকে) কেউ তাকায় না। মোক এন্যা কেউ ঠেলাগাড়ি (হুইল চেয়ার) দেন বাহে। মুই এ্যান্নাও (একটুও) চলবার পারছু না। কেউ ক্যাম্বা (যেন) মোর দিকে তাকায় না। খুব কষ্ট হচে চলবার। চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউএনও’র গড়ত (কাছে) কত ঘুরাঘুরি করন্নু (করলাম) বাহে কেউ ক্যাম্বা এ্যাটা ঠ‌্যালাগাড়ি মোক দিলি (দিলো) না।’

একটি হুইল চেয়ারের স্বপ্ন দেখেন আহাদ আলী। খুব বেশি বা খুব বড় স্বপ্ন নয়। একটি হুইল চেয়ার পেলে তার জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। সহজেই এক যায়গা থেকে অন‌্য যায়গায় যেতে পারবেন। চলাচলের কষ্ট অনেক কমে যাবে।

আহাদ আলীর বিষয়টি নিয়ে পরে কথা হয় হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রাফিউল আলমের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আহাদ নামের কোনো প্রতিবন্ধী আমার কাছে আসেনি। প্রতি বছর এডিপি বরাদ্দে আমরা প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণ করি। আহাদ আলী যদি আমাদের কাছে হুইল চেয়ারের জন্য আবেদন করেন বা নাম দিয়ে যান তাহলে তাকে হুইল চেয়ার দেওয়া হবে।

‘প্রতিবন্ধীদের আমরা খুঁজে খুঁজে হুইল চেয়ার দিই। আহাদ আলী যেহেতু প্রতিবন্ধী। তিনি অবশ‌্যই হুইল চেয়ার পাবেন।”

 

হিলি দিনাজপুর/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়