ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাঁশের সাঁকোই গ্রামবাসীর ভরসা, সেতু নির্মাণের দাবি

এইচ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৩০ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাঁশের সাঁকোই গ্রামবাসীর ভরসা, সেতু নির্মাণের দাবি

নরসিংদীতে ১৫টি গ্রামের মানুষের বাঁশের সাকোঁই একমাত্র ভরসা। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় দুই উপজেলার মানুষ এই বাঁশের সাকোঁ দিয়েই পারাপারে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের আওয়ালীকান্দা ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোই এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা। বাঁশের সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হওয়াসহ ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। একটি সেতু নির্মাণ হলে দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু না থাকায় বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ, আওয়ালীকান্দা, দীঘলদীকান্দা, জহুরিয়াকান্দা, কাশিমনগর, তালতলা গ্রাম এবং কুলিয়ারচর উপজেলার আলিনগর, নলবাইদ, ফরিদপুর, নাপিতেরচর, সালুয়া গ্রামসহ ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী ১৫টি গ্রামের লাখো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো।

এ ব্রহ্মপুত্র নদের এক পাড়ে বেলাব উপজেলার আওয়ালীকান্দা গ্রাম অন্য পাড়ে কুলিয়ারচর উপজেলার আলিনগর গ্রাম। দীর্ঘদিনের দাবির পরও এখানে সেতু তৈরি না হওয়ায় স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি সাঁকো তৈরি করে নদ পারাপার হচ্ছেন।

স্থানীয় যুবসমাজ গ্রামবাসীর নিকট থেকে বাঁশ ও অর্থ সহায়তা নিয়ে ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন। একই সঙ্গে স্থানীয়দের অর্থায়নে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাকোর সাথে একটি সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হয়। এখন অর্থের অভাবে বাঁশের সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের নদ পারাপার করতে হচ্ছে। এতে মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে বাঁশের সাঁকোটি। পণ্য পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যার কারণে পিছিয়ে পড়েছে অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান। এলাকাবাসির দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।

বাঁশের সাঁকো নির্মাতাদের একজন আকিবুল হাসান বলেন, প্রায় দুই বছর আগে সকলের কাছ থেকে টাকা তুলে এলাকার যুবকদের নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরী করি। বর্তমানে অর্থেও অভাবে সাকোঁটি মেরামত করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন নদ পারাপার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হচ্ছে। প্রায় সময়ই পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

কুলিয়ারচরের ফরিদপুর ইউনিয়ন আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদির বলেন, আওয়ালীকান্দা গ্রাম হতে শতাধিক শিক্ষার্থী বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদ পাড়ি দিয়ে আমার স্কুলে আসে। এতে  শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীই নয়, সকল শ্রেণিপেশার মানুষের উপকার হবে। পাল্টে যাবে এলাকার আর্থসামাজিক চিত্র।

ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, বাঁশের সাঁকোটি যারা তৈরী করেছেন, তারা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন ও কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাঁড়ের লক্ষাধিক জনগনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন।

বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তুফা গোলাপ বলেন, বাঁশের সাঁকোটি যেদিক দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, এর পাশেই একটি খেয়াঘাট আছে। সেখানে যদি একটি সেতু নির্মাণ করা হয়, তাহলে গ্রামবাসীর উপকারে আসবে। আমি এখানে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বেলাব উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার হয়, এটা দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। এখানে যাতে একটি সেতু নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে আমি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।


নরসিংদী/এইচ মাহমুদ/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়