ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চাটমোহরে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে ধান, সীমাহীন দুর্ভোগে কৃষক

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৩১ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
চাটমোহরে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে ধান, সীমাহীন দুর্ভোগে কৃষক

ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং তারপর কয়েক দফা বৃষ্টিতে আগাম বর্ষার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর উপজেলার শত শত বিঘা বোরো ধানের ক্ষেত।

সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। জলাবদ্ধতার কারণে পাকা বোরো ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। ধান কাটতে না পেরে মাঠেই পানিতে নষ্ট হচ্ছে স্বপ্নের ধান।

একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বিলের মধ্যে সড়ক ও ব্রিজ না থাকায় দ্রুত ধান কেটে বাড়ি নিতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা।

চাটমোহর উপজেলার চলনবিল অংশের ধূলাউড়ি জোরদহ মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা, আর পানিতে তলিয়ে আছে বোরো ধান। এই একটি ফসলে বছরের অর্ধেক সময়ের খাদ্যের সংস্থান হয় এ অঞ্চলের মানুষের। সময়মতো দ্রুত ধান কাটতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। চোখের সামনে পানিতে পঁচে নষ্ট হচ্ছে স্বপ্নের ধান। এই মাঠের একশ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধান নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

বোরো ধান ক্ষেতের কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও বা কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমে বোরো ধান কাটছেন কৃষকরা। বেশিরভাগ জমিতেই সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তাই চিটা লাগার ভয়ে কোনমতে ঘরে তোলার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ধান কাটলেও বাড়িতে নিতে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ডিঙ্গি নৌকা, পলিথিনের ভেলা, কখনও মাথায় করে ধান বিল থেকে ধান নিতে হচ্ছে।

কৃষক শানজুল ইসলাম, মানিক হোসেন, ফিরোজ আলী, আবু সাইদ জানান, এমনিতে করোনার কারণে বিপদে আছি, তার ওপর বিলের পাকা ধানের জমিতে কোমর পানি। ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধান কেটে বাড়িতে নেয়ার মতো অবস্থা নেই। কারণ বিলের মধ্যে তেমন রাস্তা নেই। পানিতে তলিয়ে আছে সবকিছু। ডিঙ্গি নৌকা বা পলিথিনে করে ধান নিতে তুলে নিয়ে আসতে হচ্ছে। তারপরও পানিতে ধান থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষতি কিভাবে পোষাবেন তারা ভেবে দিশেহারা।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কাজেম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, লিয়াকত আলী জানান, জমিতে যাতায়াতে নেই কোনো সড়ক বা ব্রিজ। বিলের মাঝে একটি ক্যানেল থাকলেও খনন না করায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে পানিতে ভেজা ধান নৌকায়, মহিষের গাড়ি বা মাথায় করে নিয়ে আসছেন তারা। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ার পাশাপাশি পাকা ধান ব্যাপকহারে নষ্ট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিলের মাঝ দিয়ে সাবমারসিবল একটি সড়ক, একটি ব্রিজ নির্মাণ ও ক্যানেলটি খননের পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনার দাবি জানালেন তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, কিছু জমির ধান নষ্ট হবে। আবার কিছু ধানের চাল গন্ধ হবে ভেজা থাকায়। নিচু এলাকা হওয়ায় প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। তারপরও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা নিরুপণ করার কাজ চলছে। সরকারি প্রণোদনা আসলে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার মোহাম্মদ রায়হান ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টার জানান, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শণ করা হয়েছে। কৃষকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত প্রাথমিকভাবে একটি সড়ক নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে। যাতে করে তারা এই সময়ে ধান কেটে বাড়িতে নিতে পারে। আর পরবর্তীতে সাবমারসিবল সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়া হবে।



শাহীন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়