ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রিকশা চালিয়ে ২ সহোদরের এসএসসি পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
রিকশা চালিয়ে ২ সহোদরের এসএসসি পাস

সহোদর নাইমুর রহমান ও ফাহিমুর রহমান

একদিকে বাবার আদর, স্নেহ থেকে বঞ্চিত, অন্যদিকে পাঁচজনের সংসার পরিচালনার ভার, তার মধ্যেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে রিকশা চালিয়ে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছেন দু’ সহোদর নাইমুর রহমান ও ফাহিমুর রহমান।

রোববার (৩১ মে) প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে যথাক্রমে তারা জিপিএ-৪ ও জিপিএ-৩ পেয়েছে।

খুলনা নগরীর দৌলতপুর এলাকার কারিকর পাড়ার গৃহপরিচারিকা মুন্নী বেগমের সন্তান তারা। রিকশার প্যাডেল ছেড়ে বর্তমানে দুই ভাই ইজিবাইকের হ্যান্ডেল ধরেছেন।

বড় ভাই নাইমুর রহমান নগরীর আফিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আর ছোট ভাই ফাহিমুর রহমান দৌলতপুর মহসিন মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

নাইমুর রহমান জানান, বাবা (নাম বলতে চায়নি) অনেক দেনা করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর আর কোনো খোঁজখবর রাখেননি আমাদের। মাঝে মধ্যে মোবাইলে কথা হলেও বাড়িতে আসেন না। বাবা চলে যাবার পর মা গৃহপরিচারিকার কাজ করলেও তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে মাকে সাহায্য করা এবং তিন ভাই-বোনের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য দুই ভাইকেই রিকশা চালানোর পথ বেছে নিতে হয়।

তিনি আরও জানান, রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হতো না। স্কুলে যা পড়তাম তাই ছিল মূল পড়া। কোচিং করার কথা কল্পনাও করতে পারিনি। তবে একজন হৃদয়বান ব্যক্তি এগিয়ে আসেন সহায়তার জন্য। তিনি বিনামূল্যে আমাদের পড়িয়েছেন।

নাইমুর জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় দুই ভাইকেই পড়তে হয় সমস্যায়। টাকার অভাবে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এক বড় ভাই আমাদের ফরম পূরণের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।

ফাহিমুর রহমান জানান, শত কষ্ট হলও রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার চালিয়ে গেছি দুই ভাই। মা আমাদের সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন।  যা আয় হয়েছে তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালানোর সঙ্গে সঙ্গে চালিয়েছি চারজনের সংসার। তবে খুব বেশি ভালো ফল আমরা করতে পারিনি। তবুও আমরা সন্তুষ্ট। আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

নাইমুর ও ফাহিমুরকে ফ্রি পড়াতেন খুলনার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাফরি বিশ্বাস। তিনি জানান, একদিন নাইমুরের রিকশায় চড়ে পাবলা থেকে খালিশপুর যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে তাদের কথা শুনে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সেই থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত আমি ফ্রি পড়িয়েছি। আর ফরম পূরণের সময় সহায়তা করেছি। তাদের এই সাফল্য তিনিও গর্বিত বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়