ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নাচোলের চার শহীদ পরিবার পায়নি স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধুর চিঠিই সম্বল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নাচোলের চার শহীদ পরিবার পায়নি স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধুর চিঠিই সম্বল

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চারজনের পরিবার সরকারিভাবে পায়নি রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি, সরকারি কোনো অনুদানও মেলেনি তাদের। স্বাধীনতার পর ওই পরিবারকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত আর্থিক সহায়তার চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাই সযত্নে রেখেছেন শহীদদের স্বজনেরা।

শহীদ চার জন ও পরিবারের সদস্যরা হলেন, নাচোল পৌর এলাকার থানা পাড়ার শহীদ এমরান আলীর স্ত্রী মোসা-গিনি বেগম, কাদিকোলা গ্রামের শহীদ নূরমোহাম্মদ লুটুর স্ত্রী সাদেনুর বেগম, পুকুর পাড়ার আমির হোসেনের স্ত্রী জেবুন নেসা ও মোমিন পাড়ার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে শহীদ আমিনুল ইসলামের ভাই মো. হেলাল উদ্দিন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে এ চারজনকে হত্যা করে বলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত ২ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চিঠি ছাড়া আর কোনো স্মৃতি নেই ওই পরিবারের কাছে।

নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহীদ এমরান আলী পরিবারকে ও পুকুর পাড়ার আমির হোসেন এর পরিবারকে একটি করে শহীদ স্মারক প্রদান করা হয়।

৭১’র যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন নাচোল পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ড’র পুকুর পাড়ার আমির হোসেন। তার স্ত্রী জেবুন নেসা বলেন, স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, কিন্তু ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বাক্ষরিত আর্থিক সহায়তার একটি চিঠি ও নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহীদ স্মারক বুকে আঁকড়িয়ে শান্তনা দিয়ে আসছি।

নাচোল পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের থানা পাড়ার শহীদ এমরান আলীর স্ত্রী মোসা. গিনি বেগম বলেন, স্বামী বেঁচে নেই। তবে ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত দুই হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চিঠি ছাড়া আর কোনো সহায়তা পাইনি। নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহীদ এমরান আলী স্ত্রী হিসেবে আমাকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। 

এমরান আলীর ছেলে নাচোল পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আহসান হাবিব জানান, শহীদ পিতার সন্তান হিসেবে গর্ব বোধ করি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের পরিবারের কোনো রকম সহায়তা বা খোঁজ খবর নেয়নি।

নাচোল পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের কাদিকোলা গ্রামের শহীদ নূর-মোহাম্মদ লুটুর স্ত্রী সাদেনুর বেগম জানান, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত আর্থিক সহায়তার চিঠি ছাড়া তাঁর নিকট স্বামীর আর কোনো স্মৃতি চিহ্ন নেই।

নাচোল পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মোমিন পাড়ার ফাইজুদ্দিনের ছেলে শহীদ আমিনুল ইসলাম ছাত্র অবস্থায় পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন, তার বড় ভাই হেলাল উদ্দিন জানান, শহীদ ছোট ভাইএর স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছি। তিনি বলেন, হয়ত রাষ্ট্রও একদিন ভুলে যাবে এসব শহীদদের কথা। আমার ভাইয়ের মতো এসব শহীদ পরিবারও স্মৃতি থেকে মুছে যাবে। আমিনুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় রাজাকার আল-বদররা। অন্য তিনজন নিখোঁজ হন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও যুদ্ধকালীন সময়ে শহীদ হওয়ায় ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত দুই হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চিঠি ও টাকা পান পরিবারের সদস্যরা।

নাচোলউপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মতিউর রহমান জানান, বিষয়টি আমি অনেকদিন পর জেনে ছিলাম এবং ওই শহীদদের স্বীকৃতির জন্য আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু কী কারণে যে তারা সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাননি তা আমার জানা নেই। তবে সময় এসেছে ওইসব শহীদদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়ার।

নাচোল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) কমান্ডার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা জনান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেলে আমারতো কিছুই করার নেই।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ/জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়