ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কিছুক্ষণের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড নাসিরনগর, নিহত ১

রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কিছুক্ষণের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড নাসিরনগর, নিহত ১

মাত্র কিছুক্ষণের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের প্রায় ১০টি গ্রাম। প্রলয়ংকারী এ ঝড়ের মধ‌্যে পড়ে আশুরইল গ্রামের আ. রশিদ মিয়ার ছেলে জিসু মিয়ার মৃত‌্যু হয়েছে।

শনিবার (৬ জুন) সকাল ৮টার দিকে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি। ঝড়ে কয়েকশ’ ঘড়বাড়ি ও অগণিত গাছপালা ভেঙ্গে পড়ছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে প্রশাসন।

ঝড়ের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী জানান, নাসিরনগর সদরের পশ্চিমপাড় (চেঙ্গাপুর), ও মহাখাল পাড়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। টেনু দাসের (৭০) টিনের ঘরের চালা পাশের একটি নারিকেল গাছের মাথায় ঝুলে আছে।

এছাড়া প্রনতী রানী দাস, বাবু দাস, জগবন্ধু দাস, জগদীশ দাস, সতিষ দাস, রতি দাস, সবুজ দাস, বুদাই দাস, অর্জুন দাস, শ্যামলাল দাস, অনন্ত দাস, হরি দাস, সুবদেবনাথ,শৈলেন দাস, এন্টু দাস, বদ্যিনাথ দাসসহ অনেকেরই টিনের চালা উড়ে গেছে ঝড়ে।

এদিকে উপজেলার ডাকবাংলোতে, জেলেদের মাছ ধরার নৌকাসহ বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী (নদীর তীরে থাকা) নৌকা ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে বিদ্যুতের খুঁটিও।

ডাকবাংলোর পাশে নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের রুমের দরজা ভেঙ্গে রুমে থাকা টেবিল চেয়ার উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কয়েকটি টেবিল বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলতে দেখা গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত প্রনতী দাস বলেন, ‘সহাল (সকাল) বেলা ঘুম থিক্কা উইঠ্যা অই অত বড় বিপদ। আমার সব লইয়া গেছেগা তুফানে (ঝড়ে)। এহন ক্যামনে কিতা করুম। করোনার লাইগ্যা রুজি রোজগার নাই। খামু কি আর ঘরই তুলুম ক্যামনে?’

ঝড়ের মুখে পড়ে কালনবালা দাস ও গোপাল দাসসহ বেশ কয়েক জন শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ঝড়ে মন্তাজ মিয়ার ঘর-বাড়ি একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। সকাল থেকে দীর্ঘ সময় তিনি বিধ্বস্ত ঘরের সামনে বসে ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াভহতা দেখে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।

মন্তাজের স্বজনরা জানান, নিজের চোখে দেখা এ ধ্বংসাত্মক দৃশ্য দেখে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে তার। তারা মন্তাজকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেছেন।

গৌর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সবুজ দাস জানান, মহাখাল পাড়ার মন্দিরের দুটি ঘরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঝড়ে। আশপাশের বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েছে।

এদিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের আক্তার মিয়ার নতুন আধা পাকা ঘরের চালা, স্কুল শিক্ষক নূর আলমের ঘর ছাড়াও একই গ্রামের রাজা বাড়ির ৮টি ঘর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। শ্রীঘর গ্রামের প্রায় ১৫টি ঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রীঘর গ্রামের মোজাম্মেল হক জুরান বলেন, ‘কয়েক মিনিটের স্থায়ী এ ঘূর্ণিঝড়টি আমার তিন ভাইয়ের ঘরসহ ১০টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী বলেন, সকালের আকস্মিক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে ছুটে গিয়েছিলাম। যা দেখলাম, উপজেলা সদরেই ৫০টির মতো ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সঠিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করছি।’

 

মাইনুদ্দীন রুবেল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়