ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অসচ্ছলদের কার্ড জব্দ করে চাল তোলেন নারী ইউপি সদস্য

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অসচ্ছলদের কার্ড জব্দ করে চাল তোলেন নারী ইউপি সদস্য

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের (১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড) নারী ইউপি সদস্য আরিফুন্নাহার বিউটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কার্ডপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের কার্ড জব্দ ও স্বাক্ষর জাল করে চাল উত্তোলন করাসহ কালো বাজারে বিক্রি এবং উৎকোচ নেওয়ার মাধ্যমে সচ্ছল পরিবারদের রেশনিং সুবিধা প্রদান করেছেন তিনি। এই অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার দাপটে স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদারকে দিয়ে নিজের সকল দাপ্তরিক কাজকর্ম করাচ্ছেন তিনি। এমনকি এলাকার হতদরিদ্ররা কোন সহযোগিতার জন্য তার কাছে গেলে স্বামীকে দিয়ে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করান এই ইউপি সদস্য। নিজে পরিষদের সদস্য না হয়েও পরিষদের নির্বাচিত সদস্যের মত মিটিংয়ে অংশগ্রহণ ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন তার স্বামী। এসব অনিয়মের সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক কঠোর শাস্তি চেয়ে নাছিমা বেগম নামের এক নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী আরিফুন্নাহার বিউটি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর পরিষদে যান না। নজরুল ইসলাম হাওলাদারই স্ত্রীর পক্ষে সকল দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকা কেজিতে মাসে ত্রিশ কেজি চাল) সুবিধা প্রাপ্ত সাত জনের কার্ড জব্দ করে স্বাক্ষর জাল করে নিজে চাল উত্তোলন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এলাকায় অনেক হতদরিদ্র থাকা সত্ত্বেও অনেক সচ্ছল এবং বিদেশ থাকা ব্যক্তিদেরও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড দিয়েছেন। অন্য এলাকায় বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও রেক্সনা বেগম নামের এক নারীকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড দিয়েছেন এই ইউপি সদস্য।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ি গ্রামের খগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের স্ত্রী কনক মণ্ডল বলেন, ‘২০১৬ সালে আমাদের নামে একটি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়। ওই কার্ড দিয়ে আমরা মাত্র তিন বার চাল উত্তোলন করেছি। তথ্য আপডেটের কথা বলে ইউপি সদস্যের স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদার আমাদের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে যান। পরবর্তীতে আমাদের ওই কার্ডে আমার স্বামীর স্বাক্ষর জাল করে অন্তত ১৪ বার চাল উত্তোলন করেছেন। কয়েকদিন আগে আবার কার্ডটি ফেরত দিয়ে গেছেন। এই কার্ডে আর চাল তোলা যাবে কিনা জানিনা।’

এলাকার ইউনুস আলী, গৌতম মজুমদার, রতন মাঝি একই অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য ও তার স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদারের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রবাসী আসলাম হাওলাদার ও নাছিরুল কাজীকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড দিয়েছেন এই ইউপি সদস্য বলেও অভিযোগ করেন তারা।

তাফালবাড়ি এলাকার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা কখনও ইউপি সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে পারি না। কোন প্রয়োজনে তার কাছে গেলে স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আর নজরুল ইসলাম হাওলাদারকে কোন চাহিদার কথা বললে রেগে যান। দ্বিতীয়বার কথা বলার কথা জানালে মারধরের ভয় দেখান।’

এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আরিফুন্নাহার বিউটিকে ফোন দিলে সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

ইউপি সদস্য আরিফুন্নাহার বিউটির স্বামী স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েই আমি আমার স্ত্রীর সকল দায়িত্ব পালন করি। রেশন কার্ডের তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে। যার ফলে আমরা কার্ড সংগ্রহ করেছিলাম। চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বারের মাধ্যমে শনাক্ত করে ওইসব কার্ডে চাল অন্যদের দেওয়া হয়। চাল আত্মসাৎ এবং অনিয়মের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, নারী ইউপি সদস্য সব কাজ করতে পারেন না, সব জায়গায় যেতে পারেন না। তাই তার স্বামীকে স্ত্রীর কাজ করার অনুমতি দিয়েছি। আর যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেন তিনি।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্থফা শাহিন জানান, একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ওই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

টুটুল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়