ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে সেতুর নিচে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪১, ২৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে সেতুর নিচে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ও পত্তন ইউনিয়নের হলিয়াজুড়ি নদীতে (খালদ্ধ বিল) বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী মৎস্য ব্যাবসায়ী। এলাকাবাসির অভিযোগ, উন্মুক্ত জলাশয়ে সেতুর নিচে নৌকা চলাচল বন্ধ করে বাঁশের বেড়া মাছ চাষ করায় হারিয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের দেশিও প্রজাতির মাছ।

আনোয়ারা বেগম, (৫৫) এই খালের পাশেই তার বাড়ি দুই মেয়ে ও অসুস্থ (প্যাড়ালাইজড) স্বামী নিয়ে তার সংসার। ছেলে সন্তান না থাকায় অভাব অনটনেই যায় তার দিনকাল। কিন্তু পানির জোয়ার আসলেই আনোয়ারা বেগম ছোট্ট নৌকা নিয়ে বাড়ির পাশের খাল থেকে মাছ ধরেন। কয়েকমাস ভালভাবে চলতে পারেন। কিন্তু এই বছর যেন দুঃখ বেড়ে গেল আনোয়ারার। কারন ৪০ বছরে কেউ বাধা না দিলেও গত কয়েকদিন আগে আনোয়ারা বেগমকে বলে দেওয়া হয়েছে, এ বছর যেন এই খাল থেকে মাছ শিকার না করেন তিনি। কারণ এই খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেখানে মাছ চাষ করবে নতুন ইজারাদাররা। তাই স্থানীয় কেউ মাছ ধরতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের নোয়াগাঁও মোড় থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে যেতে বহমান হলিয়াজুড়ি (খালদ্ধ বিল) নামে যার পরিচিতি। খালটি উপজেলার চম্পকনগর থেকে শুরু হয়ে ছোট ছোট খালে সংযুক্ত হয়ে ভারতে গিয়ে প্রবেশ করেছে। ৭ কি:মি এই খালটি দীর্ঘদিন ধরে মাছের জন্য উন্মুক্ত জলাশয় হিসাবে দেখে আসছে স্থানীয় লোকজন। এ অবস্থায় দুই ইউনিয়নে যাওয়ার মধ্যে রাস্তার সেতুতে মাছ চাষ করার জন্য স্থানীয় পত্তন ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মানিক মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী নদীর বুকে আড়াআড়িভাবে বাঁশ ও লোহার মধ্যে জাল দিয়ে সেতুর নিচে বাঁধ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। সেই বাঁশের বেড়ার উপরের অংশে অবৈধ কারেন্ট সুতার জাল দেওয়া হয়েছে। এতে লোহার তৈরী জালের সঙ্গে পানি বাধাগ্রস্থ হয়ে এপাশের মাছ অন্য পাশে যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় হুমকির মুখে পড়ছে ছোট বড় নানা প্রজাতি ডিমওয়ালা দেশিও প্রজাতির মাছ। এমনি এই ব্রিজটি দিয়ে সবসময় ছোট বড় নৌকা চলাচল করলেও এখন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে নৌকা চলাচলেও বাঁধা সৃষ্টি হবে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল। এসময় দেশিও প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করে। এসময় বাধ দেওয়া অবৈধ। এতে নদীর দেশি প্রজাতির নানা ধরনের মাছ উন্মুক্তভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে না। ফলে নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশিও প্রজাতির সিং. মাগুর, টেংরা, বোয়াইল, পাবদা, পুটি, কই, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ।

গত ২০১৮-১৯ সালের দুই বছরের জন্য ২লাখ টাকায় এই খালটি সরকার থেকে  ইজারা বাবদ এনেছিলেন স্থানীয় ইলিয়াছ মিয়া নামের এক লোক। তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলে ইলিয়াস মিয়া বলেন, এবছর যে লোক সরকার থেকে টাকা দিয়ে খালটি এনেছে, সেই লোক কোনভাবেই পানি আসার আগেই বাঁধ দিতে পারেনা। কারণ পানি শেষ হলেই তার অধিকার আছে বাঁধ দেওয়ার। তাও পানি শেষ হওয়ার এক থেকে দুইমাস আগে বাঁধ দিতে পারবে।  তার আগে সবাই এই খাল থেকে মাছ শিকার করতে পারবে। কিন্তু এখন ৬ মাস আগেই তিনি বাঁধ দিয়ে মাছ পালন করছেন, এইটা বেআইনিভাবেই করছেন বলে তিনি দাবী করেন। স্থানীয় মনির মিয়া বলেন, আগে মাছ ধরে খাইতে পারতাম, শুধু এই বছর মাছ ধরতে পারমু না। ক্ষমতার বলে কাউকে না জিগাইয়াই এই বাঁধ দিয়েছে।

এ বিষয়ে মাছ প্রজেক্টের মালিক মানিক মিয়া বলেন, আপনাদের কাছেই কেন মানুষ বিচার দেয়?  আমাকে কি তারা চিনে না? বাঁধটি একমাস পরে দেওয়ার কথা ছিল, একমাস আগে দিয়েছি। কারণ অনেক টাকা খরচ হয়েছে আমার। এই মাছের প্রজেক্টে মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ হয়েছে দাবী করে উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনারা সাংবাদিক! মানুষের ভাল জিনিস দেখেন না কেন? যান নিউজ করেন।

বিজয়নগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সালেহ বলেন, খালের বুকে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ বেআইনি। কিন্তু তাদেরকে বললে তারা কিছুই মানতে চায়না। তাদেরকে যদি বলি এভাবে চলেন, তারা অন্য ভাবে চলে। ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেই এইটার সমাধান হবে বলে মনে হয়।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুবুর রহমান বলেন, উন্মক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে কেউ মাছ চাষ করতে পারবেনা, এইটা বেআইনি। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, উন্মক্ত স্থানে আড়াআড়াভাবে ও সেতুর নিচে নৌকা চলাচল বন্ধ করে কেউ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করতে পারেনা। আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া/মাইনুদ্দীন রুবেল/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়