ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বোরোয় সাফল্য: আমনেও আগ্রহী দিনাজপুরের চাষীরা

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৭ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বোরোয় সাফল্য: আমনেও আগ্রহী দিনাজপুরের চাষীরা

বোরো মৌসুমে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় এবার আমন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের চাষীরা। বোরো ধানের কাটা মাড়াই শেষ। এখন আমন ধানের বীজ বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

সরকার এবার কৃষকদের কাছ থেকে এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনেছে। আবার ব্যবসায়ীদের কাছে কৃষকরা ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে বোরো ধানের ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা।

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোস্তাফিজার রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, এবার বোরো মৌসুমে লটারির মাধ্যমে সরকারীভাবে উপজেলায় এক হাজার ৩৭৩ জন কৃষকের কাছ থেকে এক হাজার ৩৭৩ মেট্রিকটন বোরো ধান সংগ্রহের ললক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১০০ মেট্রিকটন। ব্যবসায়ীদের কাছে ভাল দাম পাওয়ায় সরকারী গুদামে ধান কম দিচ্ছেন কৃষকেরা।

বিরামপুরের কেটরা গ্রামের মাসুদ রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি। প্রতি বছর বোরো মৌসুমে আমি প্রায় ১৮ থেকে ১৯ বিঘা বোরো ধান আবাদ করি। এবার আমন মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে আমন চাষের জন্য বীজ বপন করেছি। এবছর বোরো ধানের ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা দাম পেয়েছি। বোরোর ভাল দাম পাওয়ায় আমন চাষেও আগ্রহী হয়েছি।’

বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শ্রী নিকসন চন্দ্র পাল রাইজিংবিডিকে জানান, গেলো বোরো মৌসুমে ১৬ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে এক লাখ তিন মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। এবার আমন মৌসুমে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

উপজেলায় প্রায় ৪৫০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে তিন থেকে পাঁচ কেজি করে আমন বীজ বিতরণ করা হবে। অন্যান্যবারের চেয়ে কৃষকরা বোরো ধানের দাম অনেক বেশি পেয়েছে। তাই দাম ভাল পাওয়ায় আমন ধানের চাষে তারা আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষা শুরু হওয়ায় আমন চাষীরা বীজতলার জন্য উচুঁ জমি নির্ধারণ করছেন। বর্ষার পানিতে যেন বীজের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য এই সতর্কতা। গরুর হাল আর মই দিয়ে কৃষকরা বীজতলার জন্য জমি তৈরি করছেন। জমি তৈরি করা হলে তারা উন্নত জাতের ধানের বীজ বপন করবেন।

এক মাসের মধ্যে রোপনের উপযোগী চারা তৈরি হবে। ১৫ দিনের প্রথম ধাপে গোছি চারা তুলে অন্যত্র রোপন করা হবে। তার ১৫ দিন পর আবার সেই গোছি চারা তুলে প্রস্তুত করা জমিতে রোপন করা হবে। বীজ বপনের প্রায় ১৫ দিন পর বীজতলায় ইউরিয়া, ফসফেট সার প্রয়োগ করবেন কৃষকরা। গড়ে একমাস সময় লাগে চারা তৈরি হতে। প্রতি বিঘা জমিতে দুই কেজি বীজধান বপন করতে হয়।

বোরো চাষী হাকিমপুর (হিলি) প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বছর আমি ১৫ বিঘা বোরো ধান আবাদ করেছি। প্রতি মণ ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করেছি। আমনের ক্ষেত্রেও দাম পাবার আশা করছি। সেই আশাতেই বেশি করে আমন চাষ করছি।’

হিলির ডাঙাপাড়ার কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এবার আমন মৌসুমে আট বিঘা জমিতে ধান রোপন করব। বীজতলা তৈরি করছি। আট বিঘা জমির জন্য তিন শতক জমিতে ১৫ কেজি বীজধান বপন করব।’

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় মোট আট হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১১৪ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পাঁচ কেজি করে আমন বীজ বিতরণ করা হবে এবং আমনের ২০টি প্রদর্শনি মাঠ দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমন চাষের জন্য অনেকেই বীজ বপন শুরু করেছেন। আশা করছি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, কৃষকরা আমনের ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারবেন। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

 

হিলি (দিনাজপুর)/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়