ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হিলিতে ধান কেনায় ধীরগতি: সিন্ডিকেটকে দুষছেন চাষিরা

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ৩০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হিলিতে ধান কেনায় ধীরগতি: সিন্ডিকেটকে দুষছেন চাষিরা

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বাংলাহিলি সরকারি খাদ্যগুদামে বোরো ধান ক্রয় অভিযান ‘কচ্ছপ গতিতে’ চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাজারে দাম বেশি বলেই কৃষক গুদামে আসছে না বলে মনে করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবে কৃষক সরকারি মূল্য থেকে কম দামেই ধান বিক্রি করছেন, গুদামে ধান দিলে তাদের লাভ হতো।

এদিকে উপজেলা খাদ্য বিভাগ বলছে, স্থানীয় হাট-বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ধানের দাম বেশি। তাই কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছে না। দাম ভালো পাওয়ায় তারা বাইরে বিক্রি করছে। তবে খাদ্য বিভাগের এই কথার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে হিলিসহ আশপাশের বিভিন্ন মোকামে প্রতিমণ মিনিকেট ধান ৯৬০-৯৭০ টাকা, সম্পা কাটারী ৯৫০ টাকা, ২৮ মোটা ৮০০ টাকা, ২৮ চিকন ৯২০ টাকা এবং ২৯ চিকন ৯২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল সোমবারের বাজার হিসেবে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৭০-২৪০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্যগুদাম কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৩৭৩ মেট্রিকটন ধান কেনার কথা রয়েছে। ক্রয় অভিযান চলার কথা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। গত ৬ জুন বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ২৫-২৬ দিনে ১ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৭৬ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে।

বাংলাহিলি সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) জসেফ হাজদা রাইজিংবিডিকে জানান, পৌরসভার ইসমাইলপুর গ্রামের মোজাহার হোসেন বাবুল ও একই গ্রামের আব্দুল খালেক হোসেনের কাছ থেকে এক মেট্রিক টন করে দুই মেট্রিক ধান কেনার মধ্য দিয়ে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়েছে। এরপর কয়েক দফায় ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ৭৪ মেট্রিকটন কেনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি। তালিকাভূক্ত যেসব কৃষক খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসছে, তাদের ধান বৈরী আবহাওয়ার কারণে আদ্রতা ১৪ শতাংশের উপরে। এতে করে তাদের ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কৃষক আবার শুকিয়ে নিয়ে আসছে। তাদের ধান নেওয়া হচ্ছে। সব মিলে ধান কেনা অভিযান ধীরগতিতে হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মৎ শামীমা নাজনীন রাইজিংবিডিকে বলেন, উপজেলার ১০,৭১০ জন কৃষকের মধ্যে পৌরসভায় ২০৩০ জন, খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নে ২০৭০ জন, বোয়ালদাড় ইউনিয়নে ৩০৭৫ জন এবং আলীহাট ইউনিয়নে ৩৫৩৫ জন রয়েছেন। এবারে কিছু পরিমাণ জমিতে আউশের আবাদ হওয়ায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত ৪ মে খাদ্য বিভাগে বোরো কৃষকদের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, এই উপজেলায় ধান বরাদ্দের চেয়ে কৃষকের সংখ্যা বেশি। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নের ১০ হাজারের বেশি কৃষকের মধ্যে লটারি করে ১ হাজার ৩৭৩ জন নির্বাচন করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে এক টন করে ধান কেনা হবে। বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকেরা গুদামে ধান দিচ্ছে না। তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যে কৃষক বেশি আবাদ করেছে, তার কাছ থেকে ৫/৬ টন করে ধান নেওয়া হবে। তাহলে ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।

তথ্য আছে, ধান সংগ্রহে কৌশল করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ চক্র করে এমন কৌশল করে এককভাবে ধান দিতে পারবেনা। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

উপজেলার বৈগ্রামের কৃষক আমান উদ্দীন শেখ, বড় ডাঙ্গাপাড়ার কৃষক আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে রাইজিংবিডি জানান, সরকার বোরো ধান কেনার জন্য প্রতিমণ ১০৪০ টাকা বেঁধে দেয়। বর্তমানে বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯৬০ টাকায়। আমরা যদি গুদামে ধান দিতে পারতাম, তাহলে বিক্রি করে লাভ পেতাম। তাহলে আমাদের ধান বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হয় না।

তারা ক্ষোভে আরও বলেন, যার জমি আছে সে গুদামে ধান বিক্রির কার্ড পায় না। আবার যার জমি নাই, সে কার্ড পায়। আমরা আবাদ করেও কখনোই সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারিনি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লটারিতে নির্বাচিত একাধিক কৃষক ও স্থানিয় খাদ্য বিভাগের কয়েক জন ব্যক্তি রাইজিংবিডিকে জানান, গুদামে সঠিক সময়ে ধান না কেনায় ওই সময় অনেক কৃষক কম দামে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। আর এই সুযোগে স্থানিয় একটি ‘চক্র’ খাদ্যগুদামে ধান দেওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় খাদ্য বিভাগকে প্রভাবিত করে কৃষকদের লটারির প্রক্রিয়া বাতিল করে উম্মুক্ত করার। তাহলে গুদামে ধান বিক্রি করতে ওই চক্রটির কোনো বাঁধা থাকবে না। যে আগে আসবে, সেই গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবে-এই কৌশলের প্রস্তুতি নিয়েই চক্রটি গুদামে দ্রুত ধান দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। কারণ চক্রটি গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিম্নমানের মোটা ধান সংগ্রহ করে আগে থেকেই মজুদ করে রেখেছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুর রাফিউল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, মে মাসে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্ধারণ করেছি। ধানের দাম বাইরে বেশি থাকায় সাধারণ কৃষকেরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। গুদামে কাঁচা ধান নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও বৃষ্টির কারণে একটু সময় লাগছে। নির্বাচিত কৃষক ছাড়া অন্য কেউ গুদামে ধান দিতে পারবে না। তবে সরকার নতুন করে নির্দেশ দিলে যে কেউ দিতে পারবে।


হিলি/মোসলেম উদ্দিন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়