ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চাল আত্মসাৎ, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
চাল আত্মসাৎ, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদের বিরুদ্ধে চার বছর ধরে প্রায় আড়াইশ’ ভুয়া কার্ড দেখিয়ে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের বাহারি নগর গ্রামের বাসিন্দা ও বজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী। দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয় অভিযোগ তদন্ত করছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সোনাইমুড়ী উপজেলার ৭ নম্বর বজরা ইউনিয়নে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি পরিবারের জন‌্য ৩০ কেজি করে বছরে পাঁচ মাসের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই ইউনিয়নে ৮৪২ জন হতদরিদ্রের তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে কার্ড দেওয়া হয়। ৮৪২ জন কার্ডধারীর মধ্যে প্রায় আড়াইশ কার্ডধারী কাগজে-কলমে থাকলেও তারা চাল পাননি। অথচ ওই ভুয়া কার্ড দেখিয়ে ২৪৬ জনের চাল দীর্ঘ চার বছর যাবৎ উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান।

সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নেও অনিয়মের অভিযোগ আছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে ৯৪ জন করে হতদরিদ্রের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তার নিজ ওয়ার্ডে (৪ নম্বর ওয়ার্ড) ২২৩ জনকে তালিকাভুক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে একই পরিবারের দুজনের নামও রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই চাল পাননি। তালিকায় অনেক প্রবাসী পরিবারের সদস্যের নামও আছে।

এদিকে, চেয়ারম্যানের এসব অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে পুনঃযাচাই করান। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সহিদ উদ্দিন পুনঃনিরীক্ষা ও যাচাই করে ইউএনও বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে ২৪৬টি কার্ডে অনিয়ম ধরা পড়ে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, বজরা ইউনিয়নে সুবিধাভোগী নামের তালিকায় সমস্যাযুক্ত কার্ডধারীর সংখ্যা ১২ জন। তালিকার সঙ্গে কার্ডের উপকারভোগীর মিল নেই পাঁচজনের। ২৫ জন কার্ডধারীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। চার বছরে একবার চাল উত্তোলনকারীর সংখ্যা পাঁচজন। একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ জন। এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাওয়ার অযোগ্য আটজন। কাগজে-কলমে আছে, কিন্তু কার্ড নেই এমন মানুষ ১৪ জন। নিয়মিত চাল না পাওয়া কার্ডধারীর সংখ্যা ৪১ জন। এছাড়া, মৃত ব্যক্তির নামে ১২টি কার্ড আছে।

এ বিষয়ে জানতে বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘ইকবাল হোসেন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক বিষয়টি তদন্ত করেছে। ২০১৬ সালে এ তালিকা তৈরি হয়েছে। আমি এ তালিকা করিনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী প্রতিপক্ষের লোক।’

সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা পাল জানান, কার্ড নিয়ে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে এগুলো যাচাই-বাছাই করেছেন। এতে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। সেজন্য সব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আবার সুবিধাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করে নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে।

দুদক সমন্বিত কার্যালয় নোয়াখালীর উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম অভিযোগপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করছেন জেলা কার্যালয়ের একজন উপ-সহকারী পরিচালক। ইতোমধ্যে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের মাঝে আগামী কিস্তিতে চাল বিতরণের সময় কার্ডগুলো ভালো করে তল্লাশি করা হবে।’


নোয়াখালী/সুজন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়