ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মাদারীপুরে ২ যুবককে ডিবির নির্যাতন, বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ৮ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
মাদারীপুরে ২ যুবককে ডিবির নির্যাতন, বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ

মাদারীপুরের শিবচরে সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নে ডিবি পুলিশের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ করে দোষীদের বিচার দাবি করে চিঠি দিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই যুবক।

রবিবার পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কাজীকান্দি গ্রামের আলী হোসেন ও খুলনার রূপশার লবণচোরা গ্রামের রুবেল হোসেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে না পেরে নির্যাতন করেছে জেলার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পুলিশের পাঁচ সদস্য। নির্যাতনের শিকার দুই যুবক হলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামের মৃত সামচুউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে আলী হোসেন (২৮) ও খুলনা জেলার রূপশা উপজেলার লবনচোরা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রুবেল হোসেন (২৪) ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে শিবচরের সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের কাজীকান্দি এলাকায় চায়ের দোকানে বসা ছিল আলী হোসেন ও রুবেল। হঠাৎ সেখানে হানা দেয় মাদারীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রবিউল ইসলাম, এএসআই আল আমিন খন্দকার ও এএসআই শাহীন, কনস্টেবল করিম ও বাপ্পা। পরে আলী হোসেন ও রুবেলের দেহে তল্লাসী চালায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। তল্লাসী করে কিছু না পেয়ে ইয়াবা ও গাঁজার ছোট ছোট দুটি প্যাকেট হাতে ধরিয়ে ফাঁসাতে চান ডিবির ওই পাঁচ সদস্য। পরবর্তীতে আলী হোসেনের পকেটে থাকা গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে তা ছিড়ে ফেলে এএসআই আল আমিন ও তার সহযোগীরা। পরে আলী ও রুবেলকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে লাথি এবং কিলঘুষি দেন তারা। একপর্যায়ে ওই দুই যুবকের চিৎকারে আশাপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে স্থানীয়দের তোপেড় মুখে পড়ে ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে সেখান থেকে ডিবির সদস্যরা চলে আসেন।

যুবকদের একজন আলী হোসেন বলেন, ‘আমি পদ্মা সেতু প্রজেক্টে শিবচরে চায়নাদের প্রাইভেটকার চালাতাম। ২৫ জুন এ প্রজেক্টের চায়নাদের একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তখন চায়নারা আমাকে হোমকোয়ান্টাইনে থাকার জন্য ১৪ দিনের ছুটি দেয়। ছুটি পেয়ে আমি বাড়িতে চলে আসি। আমার প্রজেক্টে চাকুরি নেওয়ার জন্য এক ছোট ভাই ঢাকা থেকে আমার গ্রামের বাড়ি আসে। শুক্রবার দুপুরে আমি ও আমার ছোট ভাই বাড়ির পাশে একটি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে সাদা পোশাকে পাঁচজন ডিবি পুলিশ এসে আমাদের দুইজনকে খুব মারধর শুরু করে। আমি ড্রাইভার পরিচয় দিয়ে লাইসেন্স দেখাতে লাগলাম, তখন ডিবি পুলিশের একজন আমার লাইসেন্সটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়। তারা মাদক দিয়ে আমাদের ফাঁসাতে চেয়েছিল। ডিবিদের মারধরে আমি কান্নাকাটি করলে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। আমাদের দুজনকে তারা নিয়ে যাবেই। কিন্তু স্থানীয় বাড়ির আসপাশের মহিলারা পর্যন্ত এসে ডিবিদের কাছ থেকে আমাদের জোরপূর্বক রেখে দেয়। বিনা অপরাধে কেন আমাদেরকে মারধর করলো। আমরাতো কোন অপরাধ করিনি। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

আরেক যুবক রুবেল অভিযোগ করেন, তারা যখন আমাদের মাটিতে ফেলে পা দিয়ে লাথি দিচ্ছে, তখন আমরা বলেছিলাম আমাদের অপরাধ কী? যদি কোন অপরাধ থাকে, তাহলে ধরে নিয়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বেশি পেটানো শুরু করে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব‌্যক্তি জানান, পুলিশ নিরীহ দুটি ছেলেকে নির্যাতন করেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এদিকে অভিযুক্ত ডিবির এএসআই আল আমিন খন্দকার দাবী করেন, এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে গিয়ে তারা ব্যর্থ হন। পরে তার সহযোগী আলী ও রুবেলকে নিয়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীকে না পাওয়া গেলে আলী ও রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের শরীরে কোন আঘাত করা হয়নি।

মাদারীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আল মামুন বলেন, ঘটনাটি জানা নেই। তবে, শুক্রবার শিবচর উপজেলায় ডিবির ওই পাঁচ সদস্য অভিযানে গিয়েছিল।

জেলার গোয়েন্দা পুলিশের মূখ্যপাত্র ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. আব্দুল হান্নান জানান, অকারণে কাউকে মারধর করা পুলিশের ধর্মে নেই। তবে, শিবচরে এমন ঘটনা ঘটেছে আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ডিবির কোন অফিসার অন্যায় কিছু করলে, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

 

 

বেলাল রিজভী/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়