ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভারতে ফিরতে বাংলাদেশে আটকে পড়াদের আকুতি

জাহিদ মিম্পা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৯ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ভারতে ফিরতে বাংলাদেশে আটকে পড়াদের আকুতি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচক থানার গোলাপগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সমেনা বিবি। নিজের খালার মৃত্যুর খবর পেয়ে গত মার্চের ৭ তারিখ এসেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে। কিন্তু আত্মীয়ের মৃত্যুতে নিজ দেশ ছেড়ে আসায় যেন কাল হয়েছে সমেনা বিবির। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতিতে বন্ধ আছে দুই দেশের সীমান্ত পারাপার। আর এতেই নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না স্বামী, সন্তান, সংসার ছেড়ে আসা সমেনা।

শুধু সমেনা বিবিই নয়, তার মতো অনেক ভারতীয় নাগরিক সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটকে আছেন। প্রতিদিনই সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে এসে নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন এসব দিশেহারা ভারতীয় নাগরিক।

বুধবার (৮ জুলাই) দেখা গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক অপেক্ষমান ভারতীয় নাগরিককে। অঝোরে চোখের জল ফেলছেন তারা।

অশ্রুসিক্ত চোখে সমেনা বিবি বলেন, ‘এখন আমার সংসার ভাঙার পথে। ৩ ছেলে-মেয়েকে রেখে এসেছি। স্বামী বলছে, আরেকটা বিয়ে করবে। আমরা ভারতের নাগরিক, নিয়মিত ট্যাক্স দেই, ভোট দেই। তাহলে নিজ দেশে কেন যেতে পারবো না? গাড়ি চলছে, পণ্য আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে, তাহলে আমাদের নিতে সমস্যা কোথায়? নিজের স্বামী-সন্তানের কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, দেশে না ফেরালে এখানেই জীবন দিয়ে দিবো।’

মালদার বোস্টমনগর থানার গুলজারনগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভোলাহাটে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকে পড়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন ৩১ তারিখ খুলবে, তবে এখনও সীমান্ত খোলেনি। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বউ-বাচ্চা ছাড়াই একটা ঈদ করেছি, আরেকটা ঈদ চলে আসলো। ঢাকা-কলকাতাগামী চাটার্ড বিমানের টিকিটও নিয়েছিলাম, সেটাও বাতিল হয়েছে।’

মার্চ মাসের ৮ তারিখে পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলো নবম শ্রেণির ছাত্রী নূর নেসা। ১০ দিনের জন্য এসে ৪ মাস পেরিয়ে গেছে। নূর নেসা বলেন, ‘তখন কিছুই ছিলো না, তাই বই-খাতা নিয়ে আসিনি। সূর্যাপুরে যেখানে আমার স্কুল, সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ক্লাসে প্রশ্নপত্রও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি আটকে পড়াতে এখানে পড়াশোনা হচ্ছে না।’

’প্রায় ১ মাস ধরে প্রতিদিন এখানে এসে ঘুরছি, খাওয়া-দাওয়ার কোন খবর নাই। কেউ দুমুঠো খাবার নিয়ে এগিয়েও আসছে না। আজকাল বলে দিন পার করছে এখানকার অফিসাররা। বাড়িতে ছোট বোন, ফুফু মারা গেছেন, তাও যেতে পারলাম না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন, মালদার কালিয়াচক থানার শ্মশানীবাড়ি গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ হবিবুর রহমান।

কালিয়াচক থানার সুজাপুর চামাগ্রাম এলাকার মো. আহসান আলী (৩০) বলেন, ‘বাড়িতে ৩ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। ওখানে তারা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছে। আমাদের সংসারটা কে চালাবে? এসময় তিনি দুই দেশের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন ও মানবিক দিক বিবেচনায় সীমান্ত খুলে দেয়ার দাবি জানাই।’

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতের সহকারী হাই কমিশন অফিসের ০৭২১-৮৬১২১২ নম্রে একাধিকবার চেষ্ট করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার বিশ্বদীপ দে রাইজিংবিডিকে জানান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার কারণে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ‘বন্দে ভারত মিশন’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথমদিকে বিমানযোগে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরানো হলেও এখন স্থলবন্দরগুলো দিয়ে সড়কপথেই তাদের ফেরানো হচ্ছে। ভারতীয় হাইকমিশন হরিদাসপুর (পেট্রাপোল)-বেনাপোল এবং ফুলবাড়ী বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা করছে। এজন্য সবাইকে নির্দিষ্ট লিঙ্কে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। শীঘ্রই এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। কেবলমাত্র নিবন্ধিত ব্যক্তিরা প্রত্যাবাসনের জন্য বিবেচিত হবেন।

তিনি আরো বলেন, ‘সবাইকে সঠিক মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা দেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে কারণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলে আমরা যোগাযোগ করব।’

তবে দেশে ফেরত যাওয়ার পর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হতে পারে বলেও জানান তিনি।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আবেদনের লিঙ্ক

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ/হাসান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়