ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লী এখন ভুতুড়ে নগরী

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১০ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লী এখন ভুতুড়ে নগরী

সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লী এবার ভুতুড়ে নগরী।  নেই তাঁত চালানোর খটখট শব্দ।  নেই পণ্য উৎপাদনের আমেজ।

প্রতিবছর ঈদ এলেই সরগরম হয়ে উঠতো যে তাঁত পল্লী, করোনা পরিস্থিতির কারণে তার সবই যেন থমকে গেছে।  করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার প্রায় সব তাঁত কারখানা।  আর বেকার হয়ে পড়েছেন এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৮ লাখ তাঁত কর্মী।  লোকসানে ভারে নুয়ে পড়েছে একেকটি তাঁত কারখানা।  গত পহেলা বৈশাখ থেকে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ৩শ কোটি টাকা।  এই ঈদে এসে সে লোকসানের বোঝা আরো বেড়ে যাবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত মালিক ও শ্রমিক সবাই এখন বিপদে।  এ অবস্থায় শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ প্রণোদনা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁত মালিকরা।

জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, চৌহালী, কাজিপুরে তাঁত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি।  এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হয়।  বিশেষ করে উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, পাঁচলিয়া বাজারে সপ্তাহে দুই দিন বিশাল কাপড়ের হাট বসে।  এসব হাটে লাখ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়।  দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন এসব হাটে।  এমনকি সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত কাপড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।  তেমন কোন আমেজই নেই এবার।  

শুধু পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেই জেলায় প্রায় ১শ কোটি টাকার তাঁতপণ্য উৎপাদিত হতো।  সেই বৈশাখ মন্দা যাওয়ার পর ঈদুল ফিতরেও বন্ধ রাখতে হয়েছে কারখানা।  আশা ছিল ঈদুল আজহাকে ঘিরে।  কিন্তু সে পরিস্থিতি ফিরে আসেনি এ ঈদেও।  আর এ কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁত মালিকরা।

সদর উপজেলার তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল হোসেন বলেন, তাঁতের ব্যবসা নাই।  ঈদুল আজহায় ব্যবসায়ীরা আশায় ছিলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো হবে।  কিন্তু তাও আর হলোনা।  করোনাভাইরাস তাঁতীদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।  শুধু ব্যবসায়ীরা না, এর সাথে পড়েছেন বিপাকে শ্রমিক কর্মচারীরাও।  ব্যাংক ঋণ কিভাবে শোধ করবো তা নিয়ে চিন্তাই আছি।

কামারখন্দ উপজেলার দোগাছী গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ঈদুল আজহা পর্যন্ত তাঁতের ব্যবসা হয় জমজমাট। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে কোন ব্যবসাই করতে পারিনি।  এ কারণে আমরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।  

বেলকুচি উপজেলার তাঁত শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, ঈদ এলে এই উপজেলার তাঁত পল্লীতে খটখট শব্দে মুখরিত থাকতো। করোনার কারণে নিঃশব্দ হয়ে পড়েছে তাঁত পল্লী।  প্রতিমাসে আমরা ৮-৯ হাজার টাকা আয় করতাম সেই পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা কাজ করতে পারছি না।  বেকার হয়ে পড়ে আছি।  কেউ কোন সহযোগিতা করছে না। 

সিরাজগঞ্জ তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম অনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক হাজী বদিউজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কারখানা খোলা হয়েছে।  তবে রংয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি।  

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ জানান,  তাঁত শিল্পের বর্তমান অবস্থাটি উল্লেখ করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।  বরাদ্দ হাতে পেলেই তাঁত মালিকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

 

সিরাজগঞ্জ /টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়