মানিকগঞ্জের পশুর হাটে ক্রেতা কম, দামে পতন
হাসান ফয়জী || রাইজিংবিডি.কম
পঞ্চান্ন হাজার টাকায় গরুটি কিনেছিলেন আসলাম মিয়া। এরপর এক বছর ধরে সেটি লালনপালন করে বড় করেছেন। এখন ৯০-৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে তার লাভ হবে। ঈদকে সামনে রেখে রোববার (১২ জুলাই) মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ পশুর হাটে গরুটি নিয়ে এসেছিলেন বিক্রির আশায়। কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘‘৯০ হাজার টাকার ষাঁড়টির দাম কয় ৬০ হাজার টাকা। করোনা না থাকলে চোখ বন্ধ কইরা ৯০-৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতাম।’’
শুধু আসলাম মিয়া নয়, এমন চিত্র মানিকগঞ্জের সাড়ে ১৬ হাজার খামারির। সকাল থেকে জেলার বৃহৎ হরগজ হাটে পশু আসতে থাকে। দুপুরে হাট পশুতে ভরে যায়। কিন্তু ক্রেতা তেমন না থাকায় দিন শেষে অর্ধেক পশুই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে বিক্রেতাদের।
সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রাম থেকে হাটে আসা আলাল মিয়া বলেন, তিনি একটি ষাঁড় গ্রাম থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। সেটি হাটে নিয়ে এসেছেন কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করার আশায়। কিন্তু দাম উঠেছে ৫৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে মানুষের হাতে টাকা নেই। এই সাইজের গরু গত কোরবানির ঈদের আগে ৮০-৮৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলাম।’’
হাটে আসা আওয়াল নামে এক কৃষক জানান, তিনি পাঁচটি গরু হাটে নিয়ে আসেন। প্রতিটি ৮ থেকে ১০ মন ওজনের। কিন্তু ক্রেতারা দামই বলেননি।
সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী গ্রামের শুকুর আলী বলেন, গত বছর ৩০টি গরু মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাট থেকে কিনে ঢাকার গাবতলীর হাটে বিক্রি করে বেশ লাভ করেন। তিনি সারাদিন হরগজ হাটে ঘুরেছেন। গরুর দামও কম। কিন্তু ঢাকা নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন কিনা- এই শঙ্কায় কিনতে সাহস পাননি।
ধামরাই উপজেলার দেপশাই গ্রাম থেকে কোরবানির গরু কিনতে আসা ওমেদ আলী বলেন, যে ষাঁড়টি ৭১ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন; বাজার ভালো থাকলে কিনতে লাখ টাকা লেগে যেতো।
টাঙ্গাইল, সাভার, ধামরাই, রাজবাড়ী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কিছু সংখ্যক গরু বেপারীকে হাটে ঘুরতে দেখা যায। তবে তাদের গরু কিনতে দেখা যায়নি। হরগজ গ্রামের তুষার বলেন, কুমিল্লা থেকে যে সকল বেপারীরা আসেন, তারা এক থেকে দেড় হাজার করে গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার তাদের অনেকে হাটে আসেননি।
হরগজ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান বলেন, তারা হাটে কোনো ক্রেতা বা বিক্রেতাকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। তাছাড়া সব গেটে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।। বিকেল ৪টার পর বেচাকেনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবুল ইসলাম টুকু মিঞা বলেন, মানিকগঞ্জে ১৬ হাজার ৫৬৩টি পশুর খামার রয়েছে। এ সব এ বছর খামারে ৪৬ হাজার গরু, ২২ হাজার ৭১৩টি ছাগল এবং ৮ হাজার ৭৩০টি ভেড়া লালনপালন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে এ বছর ১৩টি গরুর হাট বসার অনুমতি রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে হাটে ক্রেতা সংকট রয়েছে। তবে তিনি আশা করছেন, ঈদের আগে সব পশু বিক্রি হয়ে যাবে।
ঢাকা/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন