‘শরীরের সব রক্ত বেঁচে দিমো তাও ছলটা ভালো হক'
অরিন্দম মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম
‘আমার ছলটাকে বাঁচান ভাই। শরীরের সব রক্ত বেঁচে দিমো তাও ছলটা ভালো হক। ডাক্তারোক টাকা দিতে দিতে ফকির হয়ে গেছি। ' বলছিলেন অসুস্থ ছেলে রাসেলের মা কহিনুর বেগম।
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ২নং ওয়ার্ড পিড়লডাঙ্গা গ্রামের এমরান হোসেনের ছেলে রাসেলের বয়স মাত্র ১৬। প্রায় ১ বছর ধরে দুঃসহ যাতনা সইতে হচ্ছে তাকে।
দেখে মনে হবে আশি বছরের বৃদ্ধ। ঝুলে গেছে শরীরের চামড়া। অথচ কদিন আগেও ছেলেটির চোখে মুখে ছিল তারুণ্যের উচ্ছলতা। আজ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি লিভার ক্যান্সার।
বড় দুঃসময় যাচ্ছে তার। আর্তচিৎকার হয়েছে তার নিত্যদিনের সঙ্গী। পেটের ব্যাথায় নির্ঘুম কাটে সারাটি রাত। এক অসহ্য জীবন। ছেলের এমন অবস্থায় বাবা-মা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
একদিন হঠাৎ পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হলে পার্শবর্তী জেলা জয়পুরহাটে পদ্মা ল্যাবে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, লিভারে পানি জমেছে। সেখানে ডাক্তারের দেওয়া ওষুধে কোন কাজ না হওয়ায় কিছুদিন পর লিভারে জমে থাকা পানি অপারেশনের জন্য ছেলেকে নিয়ে যান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করা হলে ডাক্তার বোর্ড বসিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, লিভারে অতিরিক্ত চর্বির সাথে রক্ত জমেছে। অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। কথামতো অতিরিক্ত চর্বি কিছু তাজা রক্ত বের করার কিছুদিন পর ছেলের কোন উন্নতি না হওয়ায় ফিরে আসেন বাড়ি। ছেলের রোগ মুক্তির জন্য এভাবে ছুটতে ছুটতে পরিবার এখন ক্লান্ত।
বাবা ছেলের জন্য অর্থ যোগান দিতে গিয়ে নিজের যতটুকু জমিজমা ছিল বিক্রি করে এখন হয়েছেন নিঃস্ব। অতিসম্প্রতি ছেলেকে নিয়ে আবার ছুটে যান বগুড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপারগতা প্রকাশ করলে শেষবারের মতো ঘরে থাকা কিছু ধান-চাল (বর্তমান বাজার মূল্য ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা) সখের একমাত্র গাভীটি (মূল্য ৮০ হাজার টাকা) বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল হসপিটালে ভর্তি করান। রাসেলকে পরীক্ষা করে ডাক্তার জানান, অপারেশনের জন্য ৩ লাখ টাকা লাগবে। নিরুপায় বাবা ছেলেকে নিয়ে এক বছর ধরে এখানে সেখানে ঘুরতে ঘুরতে জমিজমা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। অর্থের অভাবে চোখের সামনে সন্তানের এমন মৃত্যুযন্ত্রণা দেখে অর্থের খোঁজে বাবা-মা পাগলের মত ছুটে যাচ্ছেন এর ওর বাড়ি। যাকে দেখেন তাকেই ছেলেকে বাঁচানোর আঁকুতি জানান।
এই প্রতিনিধিকে দেখেও বিচলিত মা যখন আকুতি জানাচ্ছিলেন- এ সময় অসুস্থ রাসেল মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘মা আমি বাঁচতে চাই। লেখাপড়া করে বড়ো হতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলো তিনিতো মায়ের মতো। তিনি আমার জন্য কিছু একটা করবেন। '
পিতা এমরান হোসেন বলেন, ‘ছলটার পিছনে সব টাকা শেষ করেছি ভাই, জমিজমা, গরু-বাছুর সব শেষ। তাও ছলটা ভালো হলোনা। '
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলিছে ৫ লাখ টাকা দিলে ছলটার চিকিৎসা হবে, এতো টাকা কোটে পামো। প্রধানমন্ত্রী যদি এনা দয়ার দৃষ্টিতে তাকালো হিনি তাহলে ছলটা মোর বাঁচলো হিনি। '
ধামইরহাট (নওগাঁ)/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন