ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভরা মৌসুমেও মানিকগঞ্জের কামারদের কর্মহীন দিন

হাসান ফয়জী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ভরা মৌসুমেও মানিকগঞ্জের কামারদের কর্মহীন দিন

কাজ কম থাকায় গুমাচ্ছে এক কামার

কুরবানির ঈদের আগে কামারদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। প্রতিবছর ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে চাপাতি ও ছুরি বানাতে ঘাম জড়াতে হয় তাদের। কিন্তু ভরা মৌসুমেও কাজ নেই মানিকগঞ্জের কামারদের। করোনার কারণে মার্চ থেকে বিয়ে-সাদি বন্ধ থাকায় আর কোরবানি নিয়ে অনিশ্চয়তায় লোহা-ইষ্পাতের নানা জিনিস বানানোর জন‌্য আসেনা মানুষ। কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন এ পেশার লোকজন।

সরেজমিনে বুধবার (১৫ জুলাই) বিকালে মানিকগঞ্জের ওয়ারলেস পাড় গিয়ে দেখা যায় কামারদের তেমন কোন কর্মব্যস্ততা নেই। সারাদিন কোন কাজ না থাকায় অনেক কামার বসে আছে। আবার কেউ ঘুমাচ্ছেন।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রামের গকুল কর্মকার বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে আছি। এত মন্ধা দেখি নেই জীবনে। ঈদ আসছে তাই ৪টি চাপাতি বানাইছি ৫ দিন আগে। এহন পযন্ত কেউ আইসা দামই কয় নাই।’

সুভল কর্মকার বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে টানা বন্ধ ছিল আমাদের কাম। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও কাম ছিল না। ক্যামনে কাম পামু কন? বিয়ে-সাদিসহ হগল কিছুই অইবার দেয় না। তাই আমাগ বেচা কেনা বন্ধ। ভাবছিলাম ঈদ আয়লে কাম অয়ব। গেল বছর প্রতিদিন ৪-৫টি চাপাতি ও ১০-১৫ টি ছুরি বেচছি।’

বিক্রি না হলেও ছুড়ি বানানো হচ্ছে

 

ঈদুল আযহা আসলেই প্রতিবছর কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে যেত। দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে দিন রাত ঘাম ঝরত। জেলার বিভিন্ন কামারপট্টি ও হাট-বাজার এখন টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকত। পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় চাকু, চাপাতি, দাসহ নানা ধরনের উপকরণের। এসবের কদর বেড়ে যেত কোরবানির আগের এসময় গুলিতে। মানিকগঞ্জে হাজার হাজার পশু জবাই করা হয়। আর তাই কোরবানি দিতেন, তারা কোরবানির আগমুহূর্তে কামারের দোকানে ছুটতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে।

মানিকগঞ্জে সব ধরনের চাপাতি ৬০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়। একটি চাপাতি দেড়- দুই কেজির ওজন হয়ে থাকে। আর পশুর চামরা ছাড়ানোর চাকু ও ছুড়ি বিক্রি হয় বিভিন্ন প্রকার ভেদে ২০০- ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

মানিকগঞ্জ সদরের দিলিপ কর্মকার বলেন, লোহার দাম না বাড়লেও কয়লাম দাম বেড়েছে। আগে এক বস্তা পাথর কয়লা কিনতাম ৬০০ টাকা, সেই কয়লা এখন দাম ২ হাজার টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাদ্য হয়ে ইন্ডিয়ান কয়লা কিনতে হয়। তার পরও যদি বেচা কেনা না থাকে, তাহলে কীভাবে কাম করব?

তারা মিয়া বলেন, ‘আমি এখানে রোজ হিসেবে ৬০০ টাকা কাজ করছি ৩০ বছর ধরে। বেচা কেনা নাই বল্লেই চলে। বর্তমানে আমারা দা, বটি ও কুদাল বানিয়ে কোন রকম কাজ করছি। ঈদের আগে আমাদের কাজ বাড়লেও এ বছর কাষ্টমারই নাই।’

 

 

মানিকগঞ্জ/হাসান ফয়জী/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়